প্রবাস জীবন! কেমন আছেন তাঁরা?
গতকাল সৌদি আরবের হাইল প্রদেশের হুলাইফা এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে চার বাংলাদেশি পরিবারের ছয়জন মারা গেছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন একজন।
প্রায়শই মধ্যপ্রাচ্যসহ অনেক দেশে শ্রমিক ও কর্মচারি হতাহতের ঘটনা ঘটে। নির্যাতিত হন অনেকেই। অথচ ঘাম, রক্ত, জীবন দিয়েও পরিবার ও দেশের ভাগ্য পরিবর্তনে ভূমিকা রাখেন তাঁরা৷ গত চল্লিশ বছরে বিদেশ থেকে তাঁরা ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৩২ কোটিরও বেশি টাকা পাঠিয়েছেন বাংলাদেশে৷ সরকার কি তাঁদের জন্য বেশি কিছু করেছে?
ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় বাংলাদেশিদের বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে৷ এর পাশাপাশি প্রবাসে নির্যাতনও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে৷ প্রায় নিয়মিতই আসছে মৃত্যুর খবর৷ পরিবারে সুদিন ফেরানোর আশায় বিদেশে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরছেন অনেকে৷ গত এক দশকে ২৫ হাজার ২২৯ জন ফিরেছেন লাশ হয়ে৷
তাদের মধ্যে ১৮২ জনের মৃত্যুকেই খুব স্বাভাবিক বলা যায় না৷ অধিকাংশেরই মৃত্যুর কারণ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, হৃদরোগ, কর্মক্ষেত্র বা সড়ক দুর্ঘটনা কিংবা ক্যানসারের মতো জটিল কোনো রোগ৷
প্রবাসে একা থাকা, নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা, খারাপ পরিবেশে কাজ করা ইত্যাদি কারণে হৃদরোগ বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বয়স ৩৫ হওয়ার আগেই অনেকের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিচ্ছে৷
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১কোটি বাংলাদেশি কাজ করছেন৷ এর মধ্যে প্রায় ৫০ লক্ষই আছেন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে৷ ওই দেশগুলোতে কাজের সার্বিক পরিবেশ খারাপ, শ্রমিক নির্যাতনও বেশি৷
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড জানাচ্ছে, গত এক দশকে বিদেশ থেকে ২২ হাজার ৬৫১ জনের লাশ ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে বাংলাদেশে এসেছে৷ এর মধ্যে ১২ হাজার ৫৫৭ জনই কাজ করতেন মধ্যপ্রাচ্যের কোনো-না-কোনো দেশে৷ ৫ হাজার ৭৩১ জন ছিলেন সৌদি আরবে, ২ হাজার ৫২০ জন সংযুক্ত আরব আমিরাতে, ২ হাজার ১৮৪ জন কুয়েতে, ১ হাজার ১০২ জন ওমানে, ৫৩৪ জন বাহরাইনে এবং ৪৮৬ জন কাতারে ভাগ্যান্বেষণে গিয়ে লাশ হয়ে ফেরেন৷
গত কয়েক বছরে নারীদের বিদেশ গমনও বেড়েছে৷ বিদেশে তাঁদের জীবন আরো কঠিন৷ দৈনিক ১৮ ঘণ্টা কাজ করেও অনেকে প্রাপ্য পারিশ্রমিক পান না৷ শারীরিক, মানসিক নির্যাতন তো আছেই, যৌন নিপীড়ন, এমনকি ধর্ষণের শিকারও হন অনেকে৷ নিয়োগকর্তা স্বজনহীন পরিবেশে অসহায়ত্বের সুযোগে নারীদের দেহ ব্যবসায় বাধ্য করছেন– এমন খবরও নতুন কিছু নয়৷ তবুও ভাগ্যান্বেষণে দেশ ছাড়তে হয়৷
কোনো সরকার কি ঘাম, রক্ত, এমনকি জীবন দিয়েও পরিবার ও দেশের সুন্দর আগামী নির্মাণে ভূমিকা রেখে যাওয়া এই প্রবাসী বাংলাদেশিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিয়েছে?
#ইসলামী_শাসনতন্ত্র_ছাত্র_আন্দোলন সকল প্রবাসী ভাই-বোনদের প্রতি সহমর্মী ও তাদের শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশ কে বাংলাদেশ করে তোলার পেছনে অবদান রাখা এই মানুষগুলো ভাল থাকুক সবসময়; এই প্রত্যাশায়…।
তথ্যসূত্র : ডয়েচে ভেলে
স্যোসাল লিংকসমূহ