কেন্দ্রীয় সম্মেলনে (২০১৭) ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন এর কেন্দ্রীয় সভাপতি নূরুল ইসলাম আল আমীন প্রদত্ত উদ্বোধনী বক্তব্য
অর্থ: আর তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না, দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান করুন, এখানকার অধিবাসীরা অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষাবলম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও। (সূরা নিসা : ৭৫)
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক আয়োজিত কাজী বশির মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় সম্মেলন ২০১৭-এর মুহতারাম প্রধান অতিথি, গরিব-দুখি মেহনতি মানুষের আস্থাভাজন, নির্যাতিত মজলুম মানুষের একান্ত বন্ধু, মুসলিম জনতার ধর্মীয়-আধ্যাত্মিক-ও রাজনৈতিক রাহবার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সংগ্রামী আমীর আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই), উপস্থিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, আমন্ত্রিত শিক্ষাবিদ, সুধীবৃন্দ, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, প্রশাসনের কর্তব্যরত ব্যক্তিবর্গ এবং আমার সামনে উপস্থিত ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ভাই ও বন্ধুগণ! সকলের প্রতি রইলো হৃদয়ের গভীর থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
ইসলামী বিপ্লবের এই উজ্জ্বল মাইলফলক উদ্বোধনের সূচনাতেই হৃদয়ের সকল ভক্তি ও শ্রদ্ধা নিবেদন করছি সেই সব মুজাহিদিন-এ-ইসলামের প্রতি; যারা “ইলায়ে কালিমাতিল্লাহ”র জন্য সানন্দচিত্তে জীবনোৎসর্গ করেছেন। সম্মান প্রদর্শন করছি সেই সকল মহান ব্যক্তিবর্গের প্রতি; যারা “ইলমে দ্বীন”-কে যথাযথভাবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছানোর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।
আমাদের এই ভূখণ্ডের স্বাধীনতার জন্য সেই ১৭৫৭ সাল থেকে যারা আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, জীবন দিয়েছেন; বিশেষ করে ১৯৪৭-এর দেশ বিভাগ ও ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল শহীদ, গাজি ও নেতৃবৃন্দকে; যারা এদেশের মানুষের মুক্তিকে নিজেদের জীবনের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ঠিক করেছিলেন তাদের সকলকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি।
বিশেষভাবে মনে পড়ছে কালজয়ী মহাপুরুষ, ইসলামী বিপ্লবের রূপকার আত্মশুদ্ধিনির্ভর ইসলামী আন্দোলন-এর রাহবার জামানার মুজাদ্দিদ, কুতুবুল আলম মাওলানা সৈয়দ ফজলুুল করীম (রহ.)-কে; যিনি ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্তে ইশা ছাত্র আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
আমাদের প্রতিষ্ঠা থেকে যারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে অর্থ দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে এবং নানাভাবে আমাদের পথচলায় সহায়তা করেছেন তাদের সকলকে আন্তরিক কৃতজ্ঞাতায় স্বরণ করছি। স্বরণ করছি, আমাদের সেই সব শহীদদের যারা ইশা ছাত্র আন্দোলন-এর আদর্শ প্রতিষ্ঠায় জীবনোৎসর্গ করেছেন।
সংগ্রামী ভাই ও বন্ধুগণ!
মানবতার এক ক্রান্তিকালে আজকে আপনাদের সামনে বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়েছি। সমকালীন বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে জটিল ও অনিশ্চিত সময়ে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আজকের এই সমাবেশে উপস্থিত হয়েছি।
সচেতন ছাত্র বন্ধুগণ!
বিশ্ব রাজনীতির কথা আপনারা জানেন। মধ্যপ্রাচ্য আজকে জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরিতে পরিণত হয়েছে। সাদ্দাম হোসনকে বর্বর বহি:আক্রমণে সরিয়ে দেয়ার পর থেকে আজ অবধি গোটা মধ্যপ্রাচ্য নির্মম যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে বিরাজমান। সেখানকার মুসলিম শক্তিগুলো পরস্পর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্য আজকে শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্বের কুরুক্ষেত্র। বছর কয়েকে আগেও মধ্যপ্রাচ্য বিশ্ব গণমাধ্যমের সংবাদ শিরোনাম হতো, ইরানের পারমানবিক অস্ত্র নিয়ে, অবৈধ রাষ্ট্র ইজরাইলের প্রতি হামাস, হিজবুল্লাহর হুমকি নিয়ে, সিরিয়ার সৈন্য সমাবেশ, মিশর-সৌদির অস্ত্র বৃদ্ধির সংবাদ নিয়ে। মধ্যপ্রাচ্য নিজেরা শক্তিশালী হচ্ছিলো। আর জারজ ভূখণ্ড ইজরাইলের অস্তিত্বকে কাঁপিয়ে দিচ্ছিলো।
আর আজ? মুসলমানের হাত রঞ্জিত হচ্ছে মুসলমানের রক্তে। জাতিসংঘ এইক্ষেত্রে অশুভশক্তিগুলোর মন্ত্রণালয়ে পরিণত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যকে আমেরিকা-রাশিয়া নিজেদের পরস্পরের শক্তি প্রদর্শনের ক্ষেত্র বানিয়েছে। মুসলমানের রক্তে অংকিত হচ্ছে রুশ-আমেরিকার দ্বৈরথ রেখা।
বন্ধুগণ!
আমেরিকার সদ্য নির্বাচন আপনারা পর্যবেক্ষণ করেছেন। প্রচলিত সকল বিশ্লেষণকে ভুল প্রমাণিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে জিতেছে। যার প্রধান নির্বাচনী মন্ত্র ছিলো ইসলাম বিদ্বেষ। ঘৃণ্য জাতি বিদ্বেষকে পুঁজি করে সে নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। নির্বাচনে বিজয়ের পরে মানবতার ক্যানসার ইজরাইলের পক্ষে সে যেভাব দাঁড়িয়েছে তা বিরল। জাতিসংঘ ঘোষিত ইজরাইল-ফিলিস্তিন দ্বিরাষ্ট্রনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। পশ্চিম তীরে বসতি নির্মাণের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে।
বন্ধুগণ!
মার্কিন নির্বাচন আমাদের সামনে বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেছে।
প্রথমত- এই নির্বচনের মাধ্যমে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, বিশ্ব দ্রুততার সাথে সভ্যতার সংঘাতের দিকে যাচ্ছে। মুসলিমদেরকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে সমগ্র কুফুরি শক্তি ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত- এই নির্বাচনের মাধ্যমে মনে হয়েছে, পশ্চিমা বিশ্বের কাছে ইসলামের পরিচয় ভুলভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পশ্চিমারা মনে করে ইসলাম একটি শক্তি প্রয়োগ নির্ভর ও যুক্তিহীন ধর্ম। ইসলামের সুমহান দর্শন তাদের সামনে প্রতিভাত হয় নি।
বন্ধুগণ!
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের কথা আপনারা জানেন। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বর, হিংস্র ও বিভৎস নির্যাতন করা হচ্ছে সেখানকার মুসলিমদের প্রতি। মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। মা-বাবার সামনে মেয়েকে, ভাইয়ের সামনে বোনকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, মুসলিম দেশগুলোর জোট ওআইসি কোন পদক্ষেপ নেয়া তো দূরে থাক, সামান্য প্রতিবাদটুকুও করছে না। বিশ্ব রাজনীতির মোড়লরাও এই বর্বরতার বিরুদ্ধে কোন অবস্থান গ্রহণ করে নাই।
বন্ধুগণ!
ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায়, আমেরিকায় চরম মুসলিম বিদ্বেষী ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট, ফ্রান্সে উগ্রজাতীয়তাবাদী লি-পেন ক্ষমতায় আসছে, জার্মানিতে উদারনৈতিক মার্কেলের অবস্থান নড়বরে, রাশিয়াতে যুদ্ধবাজ পুতিন, দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে বর্বর বার্মিজ সন্ত্রাসীদের আখড়া জাতিসংঘ এবং নির্জীব নিথর ওআইসি। ইতিহাসের চরম অনিশ্চয়তার সময়ে বিশ্ব রাজনীতি পরিচালিত হচ্ছে। মার্কিন বার্ষিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনও বলছে, “আগামী বিশ্ব হবে সংঘাতের বিশ্ব।”
দেশপ্রেমীক ছাত্র বন্ধুগণ!
আমাদের বাংলাদেশও ভালো নেই। মন্দের ভালো যে গণতন্ত্র তাও আজ পরাভুত। প্রায় ১০ বছর ধরে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে জোর জবরদস্তি সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের ভাষ্য মতে এবং আমাদের প্রত্যক্ষ অনুধাবনেও বাংলাদেশে বাক-স্বাধীনতার চূড়ান্ত অবদমন হয়েছে। ভিন্ন মতকে মেরে কেটে-জেলে পুড়ে দমন করা হচ্ছে। সামান্য মিছিল-মিটিং সমাবেশ পর্যন্ত নির্বিঘ্ন করা যায় না। মন খুলে দু’কলম লেখা যায় না। জনগণের প্রতি রাষ্ট্র দায়িত্ববোধহীন। জনতার কাছে প্রশাসনের কোন জবাবদিহিতা নেই। জনপ্রশাসন জনতার সেবক হওয়ার পরিবর্তে কর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। দুর্নীতির সয়লাব চলছে। আইন শৃংক্সখলা বাহিনী দলীয় পেটুয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। ভর সন্ধ্যায় সরকার দলীয় সাংসদ পর্যন্ত নিহত হচ্ছে। অপরদিকে আইনশৃংখলা বাহিনী জঙ্গীবাদ দমনের নামে বিনাবিচারে মানুষ হত্যা করছে।
বাংলাদেশের প্রধান বিচারালয়; যেখানে ইসলামী মূল্যবোধে বিচার পরিচালনা হওয়ার কথা। সেখানে গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন করা হচ্ছে। আমরা এর কোনো অর্থ খুজে পাই না। গ্রিক দেবী থেমিসের কী প্রাসঙ্গীকতা আছে আমাদের দেশে? বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা কি থেমিসের আদর্শে পরিচালিত হবে? কী আশ্চর্য কথা! হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের দেশ বাংলাদেশকে গ্রিক থেকে দেবী হাওলাত করতে হবে।
আমরা এই মুর্তি স্থাপনের তীব্র নিন্দা করছি এবং অবিলম্বে এই মুর্তি অপসারণের দাবী জানাচ্ছি। অন্যথায, দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও আমজনতার মূল্যবোধ রক্ষায় আমরা কঠোর হতে বাধ্য হবো।
বন্ধুগণ!
আপনারা দেখছেন বাম-সেক্যুলারদের আস্ফালন। এই জনবিচ্ছিন্ন গুটি কয়েক মাথা মোটা আমাদের ঐক্যবদ্ধ সমাজকে ভেঙ্গে ফেলার অপচেষ্টায় লিপ্ত। এরা বাঙ্গালীদের মাঝে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছড়াচ্ছে। সে সব গল্প কবিতা পড়ে পড়ে বছরের পর বছর দেশের ধর্ম-বর্ণ নির্বেশেষে সকলে শিক্ষিত হয়েছে সেই সব গল্প কবিতা এরা চক্রান্ত করে সরিয়ে দিয়েছিলো। জনতার আন্দোলনের মুখে সরকার যখন আবারও সে সব গল্প কবিতা পাঠ্যসূচিতে সংযোজন করেছে তখন এরা অশ্লীল রকম বাড়াবাড়ি শুরু করেছে। আমরা সাবধান করে দিতে চাই। যারা এদেশের মানুষের মাঝে বিভেদ তৈরি করতে চায়, যেসব বাম-সেক্যুলাররা দেশে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করতে চায়, বাংলার জনতা তাদের সহ্য করবে না, ইনশাআল্লাহ।
সংগ্রামী ভাইয়েরা আমার!
এতোক্ষণ আপনাদের সামনে বিশ্ব ও দেশমাতৃকার যে দৃশ্যপট উপস্থাপন করেছি তা কেবলই অমানিশাপূর্ণ চিত্র। হ্যাঁ, বর্তমান বিশ্ব ও দেশের পরিস্থিতি ঘোর কালো বিপদ সংকুল অমানিশাময় ঠিকই, কিন্তু আমরা জানি, রাত যত গভীর হয় সকাল ততই নিকটবর্তী হয়। সেভাবেই এই কৃষ্ণ গহ্বেরের ওপাশেই আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে সোনালী সূর্যোদয়।
ভাই ও বন্ধুগণ!
বিশ্ব রাজনীতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার অর্থই হলো, আমেরিকার পতন রেখা প্রতিভাত হওয়া। ট্রাম্প বিশ্ব রাজনীতি থেকে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ন্যাটো থেকে সে নিজেকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে, জলবায়ু ইস্যুকে অস্বীকার করে সেখান থেকে সরে আসছে। সিরিয়া ইস্যুতে আমেরিকার অসহায়ত্ব স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। মধ্যপ্রাচ্যে অগ্নি সাগরের মাঝেই গড়ে উঠছে ইসলামী বিপ্লব। মায়ানমারের জংলীপনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে মানবতা। ভারতে মোদীর প্রতিপক্ষ দাঁড়িয়েছে। চীন-রাশিয়া পাশ্চাত্যের মোকাবিলায় শক্তি ক্ষয় করছে। সব মিলিয়ে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিকে আমরা সৃষ্টির প্রসব বেদনা হিসেবে ব্যক্ত করতে পারি।
ইসলাম প্রেমী ছাত্র জনতা!
বাংলাদেশের অবস্থা হলো দুই দলের রাজনৈতিক হানাহানিতে অতিষ্ঠ। মানুষ তৃতীয় কোন উপায় খুজছে। যার প্রতিফলন আমরা স্থানীয় সকল নির্বাচন দেখতে পাচ্ছি। বর্তমান সরকারে চেপে বসা বাম নাস্তিক্যবাদী শক্তি পাঠ্যসূচিতে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি প্রবেশ করিয়েছিলো। কিন্তু আমাদের প্রবল আন্দোলনে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।
ভাই ও বন্ধুগণ!
ইশা ছাত্র আন্দোলন-এর কর্মকৌশল হচ্ছে, অব্যহতভাবে শক্তি অর্জন ও প্রয়োজন মাফিক শক্তি প্রদর্শন। গত এক বছরে আমরা আপনাদের সাথে নিয়ে সেকাজ আঞ্জাম দিয়েছি। দেশের প্রতিটি সরকারি কলেজে ইশা ছাত্র আন্দোলন-এর পতাকা আজ গৌরবের সাথে উড্ডীন হয়ে আছে। সকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইশা ছাত্র আন্দোলন একটি উদিয়মান শক্তি। সকল আলিয়া মাদরাসা ক্যাম্পাসে ইশা ছাত্র আন্দোলন একটি চরিত্র গঠনে ও সমাজ পরিবর্তনের শক্তিশালী ধারা। সকল কওমিয়া মাদরাসায় আমরা স্বীকৃত শক্তি। ইশা ছাত্র আন্দোলন শিক্ষা প্রতিষ্ঠনসমূহে আদর্শিক ধারা তৈরি করেছে। শিক্ষার্থীদেরকে জনকল্যাণে উৎসাহিত করছে। মাদকের ভয়াল থেকে রক্ষা করছে। স্বার্থপর ক্যারিয়ার মুখীতা থেকে জনমুখী আদর্শবাদিতে পরিণত করছে। কওমি মাদরাসাসমূহে আমরা বিপ্লবের চেতনা প্রজ্জলিত রেখেছি। দেশের মসজিদসমূহের বয়ানের ধারা ইসলামী হুকুমতের দিকে পরিচালিত করেছি।
ভাই ও বন্ধুগণ!
ইসলামী বিপ্লবের পটুভূমি রচনায় গত এক বছরে ইশা ছাত্র আন্দোলন ধারাবাহিক কার্যক্রম আঞ্জাম দিয়েছে –
* দেশে নারী-শিশু হত্যা রোধে সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে রাজপথে থেকেছে।
* বি-বাড়িয়াতে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদ করেছে।
* মিয়ানমারে মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন করেছে, অসহায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের পাশে আর্থিক সাহায্য পৌছে দিয়েছে।
* উত্তরাঞ্চলের শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে। কোরবানীর ঈদে দুস্থ মানুষের জন্য কোরবানীর গোস্ত বিতরণ করেছে। পথ-শিশুদের মাঝে ঈদবস্ত্র বিতরণ করেছে, তাদের কুরআন শিক্ষার আয়োজন করেছে।
* ইসলামের সুমহান দর্শন জনসাধারণের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষে পাবলিক লেকচারের আয়োজন করেছে।
* সাংবাদিকদের সাথে দফায় দফায় মতবিনিময় করেছে।
ভাই ও বন্ধুগণ!
আপনাদের আন্তরিক সহায়তা ও অংশগ্রহণে ঐতিহাসিক “পুনর্মিলনী সমাবেশ’ করতে সক্ষম হয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ। বিগত ২৫ বছরের সকল স্তরের সদস্য-কর্মী ও নেতাদের পুনরায় বিপ্লবের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ করেছে ইশা ছাত্র আন্দোলন এবং ধারাবাহিক আন্দোলনের মাধ্যমে পাঠ্যসূচি থেকে নাস্তিক্যবাদী বিষয়াবলী বাদ দিতে বাধ্য করেছি। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল নজীর স্থাপন করে সকল ছাত্র সংগঠনকে একত্রিত করে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলেছি।
ভাই ও বন্ধুগণ!
বর্তমানে দেশে ইসলামের দু’টি দল প্রচলিত রয়েছে। একটা দল হলো, ইসলামকে সমাজ, রাষ্ট্র অর্থনীতি, রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে কেবল ব্যক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ করা। সেকুলাররা যেমন ধর্ম ও সমাজ রাষ্ট্র ভিন্ন ভিন্ন করে ফেলেছে এরাও তেমনি আলাদা করে ফেলছে। যাকে সেক্যুলার ইসলাম বলা যায়। আরেকদল ব্যক্তি জীবন থেকে ইসলামকে বিচ্ছিন্ন করে কেবল রাষ্ট্র, সমাজে প্রতিষ্ঠা করার কথা বলে এটা হলো পলিটিক্যাল ইসলাম। অথচ ইসলাম এর কোনটাই না। ইসলাম হলো জাহেলিয়াতের সকল প্রকার আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে কোরআন সুন্নাহ অনুযায়ী, খোলাফায়ে রাশেদার নমুনায়, সাহাবায়ে কেরামের অনুসৃত পথে, মানব জীবন গঠন ও সমাজের সর্বস্তরে পূর্ণ দীন বাস্তবায়ন করা। ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন আপনাদেরকে সেই পূর্ণাঙ্গ ইসলামের দিকে আহবান করছে।
ভাই ও বন্ধুগণ!
ইসলামী বিপ্লবের জন্য অপরিহার্য বিষয়গুলোর মাঝ থেকে আমাদের রয়েছে সুচিন্তিত কর্মসূচি, দক্ষ ও পরীক্ষিত নেতৃত্ব। আমাদের রয়েছে ধারাবাহিকতা । রয়েছেন আপনারা-একদল ত্যাগী ও বিপ্লবী কর্মীবৃন্দ। এর কারণেই আমরা দুর্বার গতিতে লক্ষপানে এগিয়ে চলছি।
কিন্তু বন্ধু আমার!
আমরা যে গতিতে অগসর হচ্ছি বাতিল তার চেয়েও তীব্র বেগে এগিয়ে চলছে। গোটা বিশ্ব কাঠামো, আইন-কানুন-রাষ্ট্র-সরকার-তথ্য-প্রযুক্তি সব কিছুই আজকে তাগুতের অধীনে থেকে ইসলাম নিধনে অগ্রসর হচ্ছে। আমরা যারা ইসলামী বিপ্লবের জন্য কাজ করছি তাদেরকে প্রবল-প্রমত্তা সুনামির মোকাবেলা করে সামনে অগ্রসর হতে হয়। এই আপাত অসম্ভব কাজে সফলতার জন্য আমাদের প্রয়োজন খোদার রহমত ও সাহায্য। আর খোদার রহমত কোন “ফাসেক”কে স্পর্শ করে না। সে জন্য ইসলামী বিপ্লবের কর্মী হিসেবে সবার আগে যা প্রয়োজন তা হলো আত্মশুদ্ধি। আপনাদের প্রতি আহবান রইলো, কোরআন-সুন্নাহ অনুসারে যে কোন ভাবেই হোক নিজের আত্মকে পরিশুদ্ধ করুন। যাবতীয় পাপাচার থেকে নিজেকে রক্ষা করুন।
বন্ধুগণ!
ইশা ছাত্র আন্দোলন আজকে এক বিশাল মহিরুহ। এই সংগঠনে আজ লাখো তারুণ্যের সমাবেশ। জ্বীন ও মানুষ শয়তান এখন আমাদের মাঝে কোন্দল-কলহ, নেতৃত্ব আকাংখা, আর্থিক অস্বচ্ছতা ঘটানোর চেষ্টা করবে। খোদার কসম! একটা বিপ্লবী সংগঠন ধ্বংস করার জন্য এগুলোর যেকোন একটাই যথেষ্ট। সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবল¤^ন করুন। নেতৃত্বের প্রতি নিরংকুশ আনুগত্য বজায় রাখুন। সকল রকম কোন্দল-কলহ থেকে নিজেকে এবং শাখাকে বিরত রাখুন। যাবতীয় লোভ-লালসা থেকে দূরে থাকুন। অব্যাহত তাওবা ইস্তেগফারের মধ্যে থাকুন।
বন্ধুগণ!
দাওয়াতের ধারা ক্ষীণ হয়ে গেলে সংগঠন গতিহীন হয়ে যাবে। তাই সর্ব অবস্থায় দাওয়াতের ধারা চালু রাখুন। প্রতি মাসে অন্তত ৪জনকে সদস্য করার চিরন্তন কর্মসূচি যে কোন অবস্থাতেই সচল রাখুন।
প্রিয় বন্ধুরা আমার!
জনসমর্থনকে যদি জনশক্তিতে রূপান্তরিত না করতে পারি তা হলে কাংখিত বিপ্লব আসবে না। তাই আজকের সম্মেলন থেকে প্রতিজ্ঞা করুন, আগামী ছ’মাসের মধ্যে আপনারা যার যার স্তর থেকে উপরের স্তরে উন্নীত হবেন। সদস্যরা আগামী ছ’মাসের মধ্যে কর্মী, কর্মীরা মুবাল্লিগপ্রত্যাশী, মুবাল্লিগপ্রত্যাশীরা মুবাল্লিগ হওয়ার শপথ গ্রহণ করুন।
ভাইয়েরা আমার!
আর্থিক সংকটে বিপ্লবের স্পৃহায় ঘাটতি আসতে পারে। ইলমের স্বল্পতার কারণে আপনি পথ হারাতে পারেন। নিয়মতান্ত্রিক কাজের অভাবে সংগঠন যোগসূত্রহীন হয়ে যেতে পারে। প্রচারের অভাবে আমরা অপরিচিত সংগঠন হয়ে যেতে পারি। তাই নিজের মাসিক এয়ানত সর্বদা পরিশোধ করুন। জনশক্তির সকলের নিকট থেকে অর্থ সংগ্রহ অব্যহত রাখুন। সুধীজনের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদার করুন। ইলম চর্চা করুন। নিয়মিত অর্থসহ কোরআন তেলাওয়াত করুন। রাসূল (সা.)-এর সীরাত ও সাহবায়ে কেরামের জীবনী পাঠ করুন। সমসাময়িক জ্ঞান বিজ্ঞানে পরিচিত হোন। সংগঠন পরিচালনায় নিয়মতান্ত্রিকতা অনুসরণ করুন। নিজের ব্যক্তিগত প্রতিবেদন, শাখা প্রতিবেদন ও নথিপত্র সংরক্ষণে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর কাছে আমাদের দাওয়াত পৌঁছাতে প্রকাশনাসমূহের কাম্য ব্যবহার করুন।
বন্ধুরা আমার!
মনে রাখবেন, মুক্তির জন্য শত শত বছর ধরে রক্তের নজরানা পেশ করা এই জাতি আপনার প্রতি তাকিয়ে আছে। আপনার অবহেলায় ধুলায় মিশাবে লাখো হৃদয়ের স্বপ্নস্বাধ। আপনার কাধে অর্পিত রয়েছে এদেশের কোটি মানুষের আশা-ভরসা। আপনার ব্যর্থতায় তারা আবারো রক্তের নদীতে নিমজ্জিত হবে।
বন্ধুরা আমার!
আসুন আবারো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। হয়তো ইসলামী হুকুমত নয়তো শাহাদাত এটাই হোক আমাদের হৃদয়ের তপ্ত শ্লোগান।
স্যোসাল লিংকসমূহ