ভারসাম্যপূর্ণ জীবনেই সফলতা বয়ে আসে

মুহা. এহতেশামুল হক পাঠান

মহাবিশ্বের সকল গ্রহ নক্ষত্র ক্রমাš^য়ে তাদের মধ্যে অবস্থান পরিবর্তণ করে চলেছে। ফলশ্রæতিতে তাদের ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে অথচ ভারসাম্য বজায় থাকছে তাদের মধ্যে। এর একটি ক্ষুদ্র অংশ সূর্য তার গ্রহগুলোকে একত্রে নিয়ে সম্মুখে এগিয়ে চলছে। সেখানেও একই নিয়ম। সূর্যের গ্রহ পৃথিবী-সে তার পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগর, নদী-নালা বক্ষে ধারণ করে ছুটে চলছে সূর্যের সাথে। সেখানেও এক ধরনের সু-সমš^য় সর্বদা পরিলক্ষিত হয়। দৃষ্টি যদি কিছুটা সংকীন করে আনি এবং শুধু এদেশের কথাই ধরি, তবে দেখা যাবে এখানে কোথাও রয়েছে সুশৃংখল বিস্তীর্ণ পাহাড় যেখানে সবুজের সমারোহ বসে বছরের একটা সময়ে আর তার পদতলে প্রবাহিত হয়ে চলেছে ¯্রােত¯ি^নী-এসব মিলে এক অপরুপ সৌন্দর্যের অবতারণা হয়, অথচ এর মূলে আছে অদৃশ্য অথচ সুষম ব্যবস্থাপনা। প্রকৃতির এই অমোঘ আয়োজনের উপর হস্তক্ষেপ করা হলে প্রকৃতি কখনও কখনও প্রতিশোধ নিয়ে ফেলে। এই কারণেরও ঘূর্নিঝড়, জলোচ্ছাস ইত্যাদি ঘটে থাকে।

জীব জগতেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। প্রতিটি জীবের অঙ্গ প্রতঙ্গের মধ্যে যে সুষম সমš^য় প্রদান করা হয়েছে তা হচ্ছে আর এক ধরনের সৌন্দর্য। আর তার ফলেই এর কার্যকারিতা। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ সর্বত্রই এ নিয়মের প্রলেন। এ মহানিয়মকে অগ্রাহ্য করার উপায় নেই মানব জীবনের কোন ক্ষেত্রেই। মানব জীবনের ব্যাপ্তি বেশী নয়। তবে বিস্তৃতি অনেক এবং নানাবিধ। কোন ব্যক্তি তার দৈনন্দিন জীবনে কয়টি কাজ করবেন সেটা অনেক কিছুর উপরেই নির্ভর করে। তবে মূল ব্যাপার হচ্ছে তার জন্য কয়টি প্রয়োজন আর কয়টি কাজ তিনি করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তিনি যা করবেন তা হরো তার সমস্ত কাজের একটি প্রিয়রিটি লিস্ট বা অগ্রাধিকার ভিত্তিক তালিকা তৈরী করবেন প্রথমে। সেখানে তিনি ভারসাম্য বজায় রাখবেন। এরপরে তার বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সেগুলো সম্পন্ন করবেন।

মানব জীবনে বিভিন্ন কাজের ধরন বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। একজন ছাত্রের জন্য প্রিয়রিটি লিস্ট কেমন হবে? ছাত্রজীবনে তার প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে ব্যক্তিগত জীবন গঠন। এটা হচ্ছে ছাত্র জীবনের প্রধান চাহিদা (ডিমান্ড)। এর পরেই হচ্ছে আত্মগঠনমূলক কার্যক্রম এবং তার পর পরই আসে সু¯^াস্থ্য অর্জনের প্রয়াস। পরবর্তীতে সামষ্টিক জীবনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা। তবে হ্যাঁ অবস্থার পরিবর্তনের কারণে সাময়িকভাবে এই প্রিয়রিটি এর পরিবর্তণ হতে পারে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে এই জাতির জন্য এই সম্প্রদায় বিষয়ক চিন্তাই প্রধান হওয়া উচিত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে। মানব জীবনের একটা বড় অংশ ছাত্র জীবন। এর ক্ষতি অপূরণীয় ক্ষতিই বটে। একজন ছাত্রকে অবশ্যই তার সকল কর্মকান্ডে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। এাই নিয়মটির ব্যতিক্রম ঘটছে আজকাল ব্যাপকভাবে। ফলশ্রæতিতে প্রথমত ব্যক্তি পর্যায়ে পরে সামাজিকভাবে সর্বত্র এর কুফল ছড়িয়ে পড়েছে।

ছাত্র জীবনে ভারসাম্য হারানোর কারণে কি ধরণের ক্ষতি হচ্ছে সে ব্যাপারে কিছু আলোচনা করা যাক। এদেশের ছাত্রদের মধ্যে কিছু কিছু অংশ নানাবিধ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে ছাত্র জীবনে। যার ফলশ্রæতিতে তার আন্দোলন যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হতে পারে সে কারণে অনেক বেশি সময় দিচ্ছে। এমনকি নিজের একাডেমিক পড়াশুনাকে বাদ দিয়েও। ছাত্রদের এই আন্দোলনের কতটুকু জাতি গঠনের কাজে আসবে সেটা নিরুপণ করে বলতে হবে। তবে যদি ধরে নেই দেশ ও জাতি গঠনমূলক কাজের জন্যই তাদের সময় ব্যয়িত হচ্ছে সে ক্ষেত্রে আন্দোলনের জন্য তাদের ব্যয়িত সময়ের ভারসামব্য বজায় রাখা উচিত। ছাত্রজীবন শেষ করার পর যখন তার প্রকৃত অবস্থা নিরুপন করতে পারবে, তখন তার সেই হারানো সময় ও সুযোগ ফিরে পাওয়ার উপায় থাকে না। পরবর্তীতে জীবনের জন্য যে প্রস্তুতি তার ছাত্র জীবনে নেওয়ার কথা ছিল সেটা না হওয়ার কারণে সে কর্ম জীবনে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারছে না, সমাজে সু-প্রতিষ্ঠিত হতে পারছে না। ফলে সে তার পরিবার এবং সমাজের জন্য বোঝা হয়ে পড়ছে। যে সিদ্ধান্তের কারণে এই অবস্থা তার ব্যাপারে সকল পর্যায়ে বিশ্লেষণ হওয়া উচিত এবং নীতিগত ভাবে এর একটা সুরহা হওয়া উচিত।

“তবে হ্যাঁ, এদেশের প্রতিটি ছাত্রেরই দেশ ও জাতির এহেন ক্লান্তিলগ্ন পরিস্থিতিতে একটি সুশৃংখল ও আদর্শবান সংগঠনে ¯^তস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ বর্তমান সময়েরই দাবি। একটা বিল্ডিং যেমন শুধু রড দিয়ে তৈরি হয় না, সেখানে ইট, বালি, সিমেন্ট লাগে। তদ্রুপ দেশ ও জাতির কল্যানের কিছু কিছু জীবনকে বালি হয়ে ফাউন্ডেশন তৈরি করতে হয়। যার উপর ভিত্তি করেই তৈরী হয় জাতির ভবিষ্যৎ।”

লেখক
কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন

  • লেখাটি ইশা ছাত্র আন্দোলন-এর দ্বিমাসিক মুখপাত্র ‘ছাত্র সমাচার’ আগস্ট-সেপ্টেম্বর’১৫ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।