ইশা ছাত্র আন্দোলন-এর ২৫ বছর পূর্তিতে সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ বরকত উল্লাহ লতিফ-এর অনুভূতি
১. বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতা অনস্বীকার্য। যোগ্য নেতৃত্ব তৈরী ও বিশুদ্ধ রাজনীতির চর্চায় ইশা ছাত্র আন্দোলন কাজ করে যাচ্ছে। যা গণমানুষের মাঝে নতুন আস্থার সৃস্টি করেছে। তাই আদর্শভিত্তিক এ আন্দোলন কে যদি দুর্বার গতীতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে সফলতা পদচুম্বন করবেই।
২. ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন আপন লক্ষ্যপানে কতদূর অগ্রসর হতে পেরেছে তা একটি বিশ্লেষণ সাপেক্ষ ব্যাপার। এ সংগঠন যখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তখন বেশব্যাপী সাধারণ ছাত্রদের মাঝে অন্যরকম আবেগ এবং অনুভ‚তি কাজ করেছে। সর্বস্তরের ছাত্ররা নতুন উদ্যোমে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তু মাঝপথে এসে এ উদ্যোম কিছুটা স্থিমিত হয়ে পড়ে। কারণ, প্রতিষ্ঠাকালে সাধারণ ছাত্রসহ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে এক ধরণের বিশ্বাস কাজ করেছে যে, ইসলামী আন্দোলনের মাধ্যমে খুব স্বল্প সময়ে একটি আমূল বিপ্লব সাধিত হবে। কিন্তু তা হয়নি। তবে বিপ্লবের একটি মৌলিক ভিত্তি রচিত হয়েছে। এর মাঝে সারা দেশে নেতা-কর্মীদের জেল-জুলুম ও নির্যাতন সইতে হয়েছে। বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ ছাত্র আন্দোলন ২৫ বছরে উপনীত। তাই অনিবার্র্যভাবেই ছন্দপতন হওয়াটা ছিল স্বাভাবিক। তারপরও ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন থেমে যায় নি; এগিয়েছে বহুদূর। সত্য কথা হলো- এই সংগঠনের মাধ্যমে যে ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে ওঠেছে তা অনাদর্শের চর্চাকারী ছাত্র সংগঠনসমূহের ঈর্শা ও হিংসার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা সামগ্রিক বিপ্লবের কথা বলি। তথাকথিত সন্ত্রাসবাদের বিপরীতে রুহানিয়্যাত ও জিহাদের সমন্বিত প্রয়াস সাধনের মধ্য দিয়ে গণমানুষের আস্থা ও সমর্থনপুষ্ট গণবিপ্লবের মাধ্যমে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন করতে ই আমরা। আমাদের আদর্শিক এ দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করতে না পেরে হারকাতুল জিহাদ, আনসার আল-ইসলাম ও হিজবুত তাহরির-এর মতো সংগঠনগুলো আমাদের কে শরয়ী জিহাদের বিপক্ষ শক্তি হিসেবে আখ্যা দিয়েছে বহুবার। অথচ বিশ্বব্যাপী এই ধরণের জিহাদিস্টরাই নিজেদের ভুল-অপরিনামদর্শী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সঠিক ধারার ইসলামী আন্দোলন কে বাধাগ্রস্থ করছে। বিপরীতে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন পূর্ণাঙ্গ ইসলামের যুগান্তকারী দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছে সর্বত্র। যা নতুন এক দিগন্তের সূচনা করবেই।
৩. বিশ্ব এখন সচেতন। বিশ্বায়নের বদৌলতে মানুষ এখন সামগ্রিক পরিস্থিতি কে ভিন্ন আঙ্গিকে নতুনভাবে বোঝার সুযোগ পাচ্ছে। ‘হুজুগে’র চিরাচরিত রীতি মানুষ এখন পরিহার করছে মানুষ। বিশেষ করে ইসলাম চিন্তা ও ধর্ম চিন্তায় মানুষ এখন যুক্তিগ্রাহ্য বিষয়গুলোকেই গ্রহণ করে। একটা সময় তুরষ্কে সামরিক শ্বাসন ছিল। সূদীর্ঘ সময়। কিন্তু ইসলাম নির্ভর একে পার্টি ক্ষমতায় এসে মানুষের মনে এতটুকু জায়গা করে নিতে পেরেছে যে, পরিকল্পিত একটি সেনা অভ্যুত্থানকেও তারা অকার্যকর করে দিয়েছে। এর পেছনে রয়েছে তাদের ইসলামচর্চার পাশাপাশি গণমূখী অবস্থান। অতএব পরিবর্তিত বিশ্বরাজনীতিতে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-কে উপযোগীতার স্বাক্ষর রাখতে হলে গ্লোবালাইজেশনের ধারা বুঝে আরও গণমূখী রাজনীতির চর্চা করতে হবে। তবেই বিপ্লব ত্বরান্বিত হবে।
৪. ১৯৯১-এ প্রতিষ্ঠার পরবর্তি বেশ কিছু আন্দোলন এদেশের মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে। যদিও নতুন একটি সংগঠন কে গুছিয়ে আনতে সময় নিতে হয়েছে। তারপরও বাংলাদেশে নিজেদের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি ও আস্থা তৈরীতে সক্ষম হয়েছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। তদূপরি বিগত ২৫ বছরে এই সংগঠনের অর্জন অনেক। ফতোয়া বিরোধী রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন, স্বঘোষিত নাস্তিক তাসলিমা নাসরিন বিরোধী আন্দোলন, ঢাকার মালিবাগে মসজিদ রক্ষার আন্দোলন, কওমী সনদের স্বীকৃতির দাবীতে আন্দোলন, এ্যফিলিয়েটিং ক্ষমতা সম্পন্ন স্বতন্ত্র আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষানীতি-২০১০ বাতিলের দাবীসহ অসংখ্য আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে ছাত্র আন্দোলন দেশের বৃহত্তর ছাত্র সমাজের মাঝে পৌছুতে সক্ষম হয়েছে। দ্বীনি সংগঠনের দাওয়াত ছড়িয়ে দিতে পেরেছে দেশময়। এছাড়াও বিগত দশকে আরও অসংখ্য সামাজিক ও বৈপ্লবিক কর্মসূচির মাধ্যমে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন এক মজবুত-কঠিন কেল্লায় পরিণত হয়েছে।
৫. বর্তমান ছাত্র রাজনীতি কলুষিত। বিপরীতে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর শ্লোগান হলো- প্রচলিত দলকেন্দ্রিক মানষিকতা নয়; বরং আমর বিল মারুফ ও নাহী আনিল মুনকারের এক ঈমানদীপ্ত কাফেলা। মূলত- আমাদের ছাত্র রাজনীতি হল, ইবাদাত। এতে শামিল হয়ে একজন ছাত্রের দুনিয়াবী স্বার্থোদ্ধার না হলেও তার পরকাল হয়ে ওঠে চির সুন্দর; চির অম্লান। প্রচলিত ক্যাডারভিত্তিক ছাত্র রাজনীতির বিপরীত অবস্থানে থেকে ছাত্র আন্দোলন নিজেদের সদস্যদের দৈনন্দিন প্রতিবেদন তথা রিপোর্ট ফরম পূরণ করিয়ে ছাত্রদের চলার গতিপথকে এক পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এতে করে ছাত্ররা ভাল ফলাফল করে বলে তাদের পরিবারের আস্থা তৈরী হয় সংগঠনের প্রতি। পাশাপাশি ছাত্র আন্দোলন গরীব মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তি দিয়ে তাদের ক্যরিয়ার গড়ায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। কমিটমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া ছাত্রদের উচ্চতর পড়াশোনার সুযোগ করে দিচ্ছে। এতে অভিভাবকদের গভীর আস্থা অর্জন করেছে সংগঠনটি। আমরা দেখি- সরকারের সর্বমহলে বড় শিক্ষিতরাই বড় বড় উৎকোচ গ্রহণ করে। এর একমাত্র কারণ- দেশপ্রেম ও খোদাভীতির অভাব। তাই ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-একদল দক্ষ, যোগ্য, খোদাভীরু ও দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠি গড়ে তুলছে। ইতোমধ্যেই এর ফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ।
৬. বিপ্লব তাদের দিয়েই সম্ভব, যাদের কোন পিছুটান নেই। তাই তরুণ-ছাত্ররাই এর উপযোগী শক্তি। হযরত রাসূলে কারীম সা. বলেছেন, আমি শাবাব তথা যুবকদের মাধ্যমেই সবচে’ বেশি সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছি। অথচ বর্তমান সময়ে যুবকদেরকে ইসলামের নামেই সবচে’ বেশি বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদ কে জিহাদ বলে চালিয়ে দিচ্ছে একশ্রেণির নামধারী মুখোশেরা। অথচ বর্তমান বাংলাদেশে ক্বিতাল তথা সশস্ত্র বিপ্লব মুসলমানদের জন্য আত্মঘাতি সিদ্ধান্তের নামান্তর। গবেষনায় দেখা গেছে বাংলাদেশে গণবিপ্লবই বিপ্লবের সর্বোৎকৃষ্ট ও শ্রেষ্ঠ পন্থা। আর এই পথেই সুদূরপ্রসারী কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। তাই এখন যোগ্য নেতৃত্ব তৈরীর পাশাপাশি দল-মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার কাছে এর উপযেগিতা ও বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে হবে। গণমানুষের আরও কাছাকাছি পৌঁছে যেতে হবে। বিপ্লবের পটভূমি তৈরি তখন হবে শুধু সময়ের অপেক্ষা।
স্যোসাল লিংকসমূহ