12814072_188933711481026_1733119630396722351_n

মুহাম্মাদ আজিজুল হক

মানব সভ্যতার প্রাণশক্তি হল শিক্ষা। অনেকে বলে থাকেন শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। তবে বর্তমানে সমাজের দিকে তাকালে বলতে হয় সু-শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। আর কুশিক্ষা সমাজ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার মোক্ষম হাতিয়ার। শাব্দিক অর্থের দিক থেকে শিক্ষা শব্দের ইংরেজি Education অর্থ অবগতি বা জ্ঞান প্রদান।

মহাকবি মিল্টনের মতে, “Education is the harmonious development of body mind and soul.”

অর্থাৎ শিক্ষা হল দেহ মন ও আত্মার সমন্বিত উন্নতি সাধন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষাকে তুলনা করেছেন পরশ পাথরের সাথে। তার চিন্তা অনুযায়ী শিক্ষা হল পরশ পাথর। তার থেকে ছিটকে পড়া আলোটাই হচ্ছে কালচার। মহাকবি আল্লামা ইকবালের মতে শিক্ষার উদ্দেশ্য হল খুদী বা আত্মা বা আত্মার উন্নতি সাধন। খুদীর উন্নতি হলে, সেই মানুষের কর্মকান্ড সুষমা মন্ডিত করতে সক্ষম।

Stanly huk বলেছেন If you teach your children the three K.S Cic Reading writing and Arithmetic and leave the fourth R. (ic religion you will get a fifth R(ic Rascality)

সুদূর উদ্দেশ্যে দেশের জন্য পরিকল্পনা যেমন হবে শিক্ষা ব্যবস্থা তেমনই পরিকল্পনার আলোকেই নির্মাণ করা উচিত।

চীন দেশে একটা প্রবাদ আছে, তুমি যদি শত বছরের পরিকল্পনা কর, তাহলে গাছ লাগাও আর যদি হাজার বছরের পরিকল্পনা  করে থাক, তাহলে মানুষ তৈরী কর। শিক্ষার সংজ্ঞা এবং উদ্দেশ্যানুযায়ী প্রমাণিত হচ্ছে যে, একটি মূল্যবোধ অপরিহার্য। মহাগ্রন্থ আলকোরআন হাত-পা, চোখ-কান, বিশিষ্ট শরীরটাকে প্রকৃত মানুষ বলে না। বরং এ দেহ সৃষ্টির বহুপূর্বেই মানুষের আত্মা সৃষ্টি হয়েছে। আর সেই আত্মাই হলো প্রকৃত মানুষ। এ আত্মাই নৈতিকতার আধার। রূহকে উন্নত করার ব্যবস্থা না করলে, এই শরীর পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট ব্যবহার করবে। পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী স্বার্থ পূজারী সভ্যতার মনুষ্যত্ব উপহার দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

সম্প্রতি লন্ডনে অনুষ্ঠিত একেটি সম্মেলনে মুসলিম, খ্রিস্টান, হিন্দু, এবং ইহুদী সম্প্রদায়ের বড় বড় শিক্ষাবিদগণ সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেছেন, ধর্ম ছাড়া মূল্যবোধ লালন করা সম্ভব নয় এবং ধর্ম ছাড়া শিক্ষাও হতে পারে না। দুনিয়াতে যা কিছু মহৎ, যা কিছু কল্যাণময় , ধর্ম তার সবটা মানুষকে শিক্ষা দিয়েছে। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ সা. নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে নিজেকে আল্লাহর পক্ষ থেকে শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।

ইংল্যান্ডের ভবিষ্যত রাজা যুবরাজ চার্লস বিগত কয়েক বছর ধরে নৈতিক বিপর্যয়ের জন্য সে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন। দুনিয়ার মানবতাকে ভালমন্দ সত্যমিথ্যা মানবাতবোধ, মানুষে মানুষে সাম্য ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে মানুষের কল্যাণ কামনার জন্য একমাত্র ধর্মই উদ্বুদ্ধ করেছে।

বাংলাদেশে ইসলামী মূলনীতি অনুযায়ী একটি শিক্ষা ব্যবস্থা রচিত হওয়া গণতন্ত্রের দাবী। কারণ এদেশে ৮৭% মুসলমান অর্থাৎ ইসলামে বিশ্বাসী। সেই ধর্মের মূলনীতি নৈতিক মূল্যবোধ অনুযায়ী একটি সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা রচিত হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক , সেটা হয়নি। ইংরেজ আমলে লর্ড মেকলে একদল অনুগত গোলাম, কেরানী, চাপরাশী ও আমলা প্রভৃতি তৈরীর উদ্দেশ্যেই শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নের ব্যবস্থা করেছিলেন। আরও সুদূর প্রসারী লক্ষ্য ছিল যদি কখনো এসব উপনিবেশ ছেড়ে যেতে হয়, তাহলে তাদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য এমন একদল লোক রেখে যাওয়া, যারা নামে ধর্মে যাই হোক না কেন, আচার আচরণে ও সংস্কৃতিতে হবে ইংরেজ, হয়েছেও তাই। দুই দুই বার স্বাধীনতালাভ করার পরও কোন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা গোলামী যুগে যা প্রণীত হয়েছিল তা অটুট থাকে এমন দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল।

আমাদের শিক্ষার ইতিবাচক কার্যকারিতা নেই। যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি গ্রহণের পরও জীবনের মুখোমুখী দাঁড়াতে  আমরা ভয় পাই।

আমরা শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে এখন সংশ্লিষ্ট সেখানে গতিময় জীবনের কোন স্পন্দন নেই। জীবনকে সাহসিকতার সঙ্গে মোকবিলা করার মত কোন শিক্ষা নেই, যা আছে তা আসলে পুরাতন জরাজীর্ণএক বিশাল স্থবিরতারই নামান্তর। এই শিক্ষা দিয়ে না দুনিয়ার কোন কাজ হয়, না আখিরাতের কোন কাজ হয়।

শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিত জাতি কিভাবে দুর্নীতিমুক্ত হতে পারে? যেখানে একটি ল্যান্ড ফোনের জন্য একটি ফইল দশটি টেবিল ফলওয়ার্ডিং করতে হয়।

ইসলামই পারে একমাত্র দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে। ইসলামের মূল শিক্ষা হলো তাওহীদ, রেসালাত ও আখিরাত। এই তিনটি বিষয়ে ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে রাসূল সা. সাহাবাদের এমনভাবে গড়ে তুললেন, এমন একটি হিরক খন্ডে পরিণত করলেন, যা সর্বকালের বিস্ময়, যে কোন মানদন্ডের চূড়ান্ত শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। তাঁদের ইনসাফ ও হিম্মতের সামনে সারা দুনিয়া মাথানত করে দিল। বিশ্ববাসী পৃথিবী প্রলয় হওয়া পর্যন্ত যাঁদের নিয়ে গর্ব করতে পারবে। এটা জীবন্ত ইতিহাস, এর মূল শক্তিকেন্দ্র হয়েছে আল্লাহ, তাঁর রাসুল সা. ও এর মূল শক্তি কেন্দ্র হয়েছে আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য।

সম্প্রতি আমাদের দেশে মনিরুজ্জামান শিক্ষা কমিশন নামে যে কমিশন গঠিত হয়েছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সাথে আশার আলো ফুপাতে পারবে কিনা, তা আসমান জমিনের মালিক ভাল জানেন।

লেখক-

কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক

ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন

  • লেখাটি ইশা ছাত্র আন্দোলন-এর দ্বিমাসিক মুখপাত্র ‘ছাত্র সমাচার’ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি’১৫ সংখ্যায় প্রকাশিত।

লেখাটির পিডিএফ ভার্সন ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন