দাবি আদায় না হলে সারাদেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ-এর ঘোষণা
বিতর্কিত শিক্ষানীতি, শিক্ষাআইন এবং হিন্দুত্ববাদী ও নাস্তিক্যবাদী পাঠ্যসূচী বাতিল না করলে সারাদেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ এবং সকল বিভাগে বিভাগীয় মহাসমাবেশের মাধ্যমে দেশবাসীকে নাস্তিক্যবাদী পাঠ্যসুচী বাতিলের দাবির সাথে সম্পৃক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই।
ইসলাম ধর্মবিরোধী পাঠ্যসুচী, শিক্ষাআইন ও শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন ঘোষিত মাসব্যাপী কর্মসুচী পালনশেষে গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জাতীয় মহাসমাবেশে এ ঘোষণা দেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার উপস্থিতিতে পীর সাহেব চরমোনাই এ ঘোষণা দেয়ার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন, ইশা ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় শিক্ষক ফোরাম, ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ ও ইসলামী আইনজীবি পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, ওলামায়ে কেরাম, বুদ্ধিজীবি, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকগণ।
পীর সাহেব বলেন, দেশকে ১৯৪৭- এর পূর্বাবস্থায় নিয়ে যাওয়ার যড়যন্ত্র চলছে। আমরা আজ আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে শংকিত। আমাদের স্বাধীন জাতিসত্ত্বা আজ হুমকির মুখে। আমাদের ধর্ম-বিশ্বাস ও আমাদের স্বকীয় সংস্কৃতি ধ্বংস করার জন্য গভীর চক্রান্ত শুরু হয়েছে। জাতীয় শিক্ষনীতি ২০১০ ও শিক্ষা আইন ২০১৬ সেই ষড়যন্ত্রেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা এর প্রতিবাদ করেছিলাম। সরকার আমাদের আপত্তি তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে জাতীয় শিক্ষানীতি এবং ইসলাম ধর্মবিহীন পাঠ্যসুচী অনুমোদন করেছে।
তিনি বলেন, সিলেবাস থেকে অনেক মুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের ইসলামী ভাবধারায় রচিত প্রবন্ধ, গল্প ও কবিতা পাঠ্য বই থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে পাঠ্য বইতে নতুন করে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে হিন্দু ধর্ম সম্পর্কীয় বিভিন্ন বিষয়াদী। অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে এমন সব প্রবন্ধ, গল্প ও কবিতা যা আমাদের স্বাধীতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যা আমাদের মুসলিম সমাজ ও সভ্যতাকে চ্যালেঞ্জ করে।
বিতর্কিত শিক্ষানীতি, শিক্ষাআইন এবং হিন্দুত্ববাদী ও নাস্তিক্যবাদী পাঠ্যসূচী বাতিলের দাবিতে গতকালের জাতীয় মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। মহাসমাবেশ জুমআর পর হওয়ার কথা থাকলেও ফজর নামাজের পরই সারাদেশ থেকে লাখ লাখ জনতার উপচেপড়া ভীড় রাজধানীজুড়ে শুরু হয়। মহাসমাবেশ চলাকালে একের পর এক মিছিল আসতে থাকে। সমাবেশ শেষে জনতা ফেরার পথে মিছিলে মিছিলে সারা ঢাকা আন্দোলনের শহরে পরিণত হয়। বিতর্কিত শিক্ষা আইন, শিক্ষানীতি ও ধর্মনিনাশী সিলেবাসের বিরুদ্ধে মিছিলে মিছিলে জনতার ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে। পীর সাহেব ঘোষিত অন্যান্য কর্মসুচী হচ্ছে- মহাসমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই ঘোষিত ৮ দফা কর্মসূচি হচ্ছে: আসন্ন বাজেট অধিবেশন চলাকালীন জাতীয় সংসদ অভিমূখে গণমিছিল ও স্মারকলিপি পেশ, সচেতনতা সৃষ্টির জন্য লিফলেট বিতরণ ও গণস্বাক্ষর অভিযান (১ লা জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত), সারাদেশে ইউনিয়নে ইউনিয়নে মানববন্ধন- ২০ জুলাই, সারাদেশে থানায় থানায় মানববন্ধন- ২৮ জুলাই, জেলায় জেলায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ- ৫ আগষ্ট, ৮ বিভাগে বিভাগীয় মহাসমাবেশ- ১১ আগষ্ট থেকে ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রণালয় অভিমূখে গণমিছিল- ৫ অক্টোবর, এর পরও দাবী মেনে না নিলে ঢাুকা অভিমূখে লংমার্চ।
সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ুম ও মাওলানা নেছার উদ্দীনের পরিচালনায় মহাসমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, মাওলানা আবদুল আউয়াল ও মাওলানা আবদুল হক আজাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা নূরুল হুদা ফয়েজী, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, পীর সাহেব সন্ধিপী রহ. এর জামাতা মুফতী ওমর ফারুক, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মহাসচিব মাওলানা মিজানুর রহমান সাঈদ, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমীর ড. মাওলানা ঈসা শাহেদী, ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা লোকমান হোসাইন, আমীরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, নগর সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, যুুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কাদের, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম ও আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম, বিশিষ্ট আলেম মুফতী মোহাম্মদ আলী, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, কে এম আতিকুর রহমান, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, আলহাজ্ব জান্নাতুল ইসলাম, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, জাতীয় শিক্ষক ফোরামের সদস্য সচিব এবিএম জাকারিয়া, ইসলামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী এড. লুৎফর রহমান, ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, ইশা ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছাত্রনেতা নূরুল ইসলাম আল আমিন ও জেলা প্রতিনিধিবৃন্দ।
পীর সাহেব বলেণ, হিন্দু ধর্মের ছেলে মেয়েরা হিন্দু ধর্মীয় বিষয়াদী পড়বে, এতে কারো আপত্তি নেই। কিন্তু মুসলমান ছেলে মেয়েদের জন্য হিন্দু ধর্মীয় বিষয়াদী যেভাবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তা কোন বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে পারে না। বিষয়টি অবশ্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও উস্কানীমূলক। এই উস্কানীমূলক জঘন্য কাজ যারা করেছে ক্ষমতাসীনরা তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা না নিলে শুধু সরকারকেই নয়, গোটা জাতিকে এর মাশুল দিতে হবে।
মহাসমাবেশে মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেন, দেশে আস্তিক ও নাস্তিকের লড়াই শুরু হয়েছে। ইসলাম বিনাশী শিক্ষাআইন, শিক্ষানীতি ও বিতর্কিত সিলেবাস বাতিলে দেশের ঈমানদার জনতা জীবন ও রক্ত দিতে প্রস্তুত আছে।
ড. ঈসা শাহেদী বলেন, ইসলাম মুসলমানদের ঈমানে আঘাত এসেছে। হিন্দুত্ববাদী ও নাস্তিক্যবাদী শিক্ষানীতি, শিক্ষা আইন ও হিন্দুত্ববাদী সিলেবাস বাতিলের এই আন্দোলন শুধু পীর সাহেবের নয়, সকল মুসলমানের। কাজেই সকলকে আন্দোলনে নামতে হবে।
অধ্যক্ষ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, নাস্তিক্যবাদের পৃষ্ঠপোষক শিক্ষামন্ত্রী। তাকে পদত্যাগ করতে হবে। কোন নাস্তিক-মুরতাদের জানাজা এদেশে হবে না।
আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী বলেন, কালিদাস বৈদ্যের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্যই সরকার এই ধর্মবিনাশী শিক্ষা পাঠ্যসুচী করেছে। এটা বাতিল না হলে সারাদেশে আন্দোলনের দাবানল জ্বলে উঠবে।
অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, এই শিক্ষানীতি কোন দেশ প্রেমিক মুসলমান মেনে নিতে পারে না। সরকার এই জঘন্য শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে জাতীয় শিক্ষা আইন ২০১৬ পাশ করার উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা আজকের এই মহাসমাবেশ থেকে প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জাতি বিধ্বংসী ষড়যন্ত্রের এই শিক্ষাআইন প্রত্যাখ্যান করবে।
মুফতী ওমর ফারুক বলেন, ইসলামের উপর আঘাত শুরু হয়েছে। এই আঘাত প্রতিহত করতে হবে।
মুফতী মিজানুর রহমান বলেন, কারা তৈরী করেছে এই সিলেবাস? এই সর্বনাশা সিলেবাসতো আওয়ামীলীগেরও চেতনা বিরোধী। আওয়ামীলীগের মুসলমান ভাইয়েরা তাদের সন্তানদেরকে কিছুতেই হিন্দুয়ানী বা নাস্তিক্যবাদী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবে বলে আমার বিশ্বাস হয় না।
অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, আমাদের জাতিসত্ত্বা ধ্বংস করে হিন্দুত্ববাদের নিয়ে যাওয়ার অপরিনামদর্শি খেলা বন্ধ করতে হবে।
স্যোসাল লিংকসমূহ