চরমোনাই’র মাহফিল ও একটি স্মৃতি

মোর্শেদ শফিকুন্নবী বাইজিদ

২০১৩ সাল। প্রতি বছরের ন্যায় চরমোনাই মাহফিলের নমুনায় কুড়িগ্রামে ইজতেমা শুরু হয়েছে। আবহাওয়াটা খুব একটা ভালো ছিলো না। কনকনে শীত। তার উপর ধরলা নদীর পাশে প্রচুর ঠাণ্ডা। এই ঠান্ডাকে উপে¶া করে ইজতেমা ময়দানে লাখ লাখ মানুষ ছুটে আসছিলো পঙ্গপালের মতো। সাধারণত এ ধরণের মাহফিলে বৃদ্ধদের উপস্থিতি বেশি ল¶ করা যায়, কিন্তু এবার উঠতি বয়েসী যুবকদেরও উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।

প্রথম দিনই ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ। এন্তেজামিয়া কমিটি লোকজনের উপস্থিতি দেখে যথারীতি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলো। প্রায় ১২ ল¶ মানুষের ধারণ¶মতা সম্পন্ন প্যান্ডেল তৈরী করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী বাদ যোহর পীর সাহেব চরমোনাই‘র উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হলো ইজতেমার কার্যক্রম। এদিকে মানুষ আসছে তো আসছেই…। দ্বিতীয় দিন প্যান্ডেলের ভিতর আর জায়গা নেই। লোকে লোকারণ্য ধরলা নদীর পূর্বপাড়ের ইজতেমা ময়দান। মানুষজন প্যান্ডেলের বাইরেই যে যেভাবে পারছে কোনরকমে একটু জায়গা করে বসে পড়ছে শায়েখের মুখেনিসৃত কিছু কথা শোনার জন্য। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। সারাদিন দেশের বিভিন্ন ওলামায়ে কেরাম বয়ান করছেন। এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি যা বলে বোঝাতে পারবো না। পূর্বাকাশে মেঘ জমছিলো, মনে হয় বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি হলে এতগুলো মানুষ কোথায় যাবে, কিভাবে থাকবে মনে মনে ভাবছিলাম। বিশেষ করে বৃদ্ধদের কথা ভাবছিলাম, আমরা না হয় শরীরের সাথে মানিয়ে নিতে পারবো কিন্তু এই বৃদ্ধরা কি করবে! সব সেই মহান মালিকের মর্জি।

রাতে যথারীতি বয়ান হলো, নামাজের পর খাওয়া দাওয়া করে সবাই ঘুমাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমাদের চোখে ঘুম ছিলো না, দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলাম পুড়ো মাঠজুড়ে। সারা বছর তো ঘুমাতে পারবো কিন্তু এমন আবেগঘন মূহুর্ত কি আর পাব?। রাত তখন একটা বাজে। হঠাৎ অঝোর ধারায় শুরু হলো বৃষ্টি। মুষলধারে বৃষ্টি। আমরা ছাত্র আন্দোলনের স্টলে আশ্রয় নিলাম। অনেকে সারাদিন কষ্টের পর ক¤^ল মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে। ক¤^লের উপর দিয়ে বৃষ্টি চলে যাচ্ছে কিন্তু আল্লাহর বান্দারা ঘুমাচ্ছেই। যতটুকু সম্ভব সাধ্যমতো পলিথিন টাঙ্গিয়ে দিলাম কিছু যায়গায়। আবার অনেকে বাড়ি থেকে পলিথিন নিয়ে এসেছে শীত থেকে বাঁচার জন্যে। এখন সেই পলিথিন অনেকটা কাজে দিচ্ছে। অনেকে সেখানেই একটু ঠাঁই করে নিলো। আবার অনেকে ভিজে একাকার অবস্থা। এই তীব্র শীত! তার সাথে বৃষ্টি, এ এক অন্য ধরণের পরিবেশ সৃষ্টি হলো সেখানে। সারারাত বৃষ্টিতে ভিজে পরদিন সকালে মাঠ ফাঁকা হবার কথা, কিন্তু একি? মাঠে তিল ধারণের জায়গাও নেই। এমনকি এই বিশাল জামাতে ফজরের নামাজ আদায় করার জন্য আরো মানুষ আসছে। সারারাত বৃষ্টিতে ভিজেও কারো মনে কোন অসন্তুষ্টি নেই। সকালেও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো। অবশেষে মাহফিলের পরিস্থিতি দেখে শায়েখ দ্বিতীয় দিনেই আখেরী মোনাজাত করে মাহফিলের সমাপ্তি ঘোষনা করেন। সবাই বাড়িতে ফিরছিলো এক অতৃপ্ত হৃদয় নিয়ে…।

এ বছরের ২৪, ২৫, ২৬ ডিসে¤^র ইনশাআল্লাহ প্রতিবছরের ন্যায় ইজতেমা হবে, ইতোমধ্যে মাহফিলের প্যান্ডেলের কাজ শুরু হয়ে গেছে। শায়েখ রহ. এর মুখে উচ্চারিত এই দ্বিতীয় চরমোনাই-এ এভাবেই যেন আজীবন দ্বীনের কাজ চলতে থাকে এটাই কামনা করি মহান রবের কাছে।

লেখক
অর্থ সম্পাদক
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন
কুড়িগ্রাম জেলা শাখা

  • ছাত্র সমাচার : ডিসেম্বর’১৫ সংখ্যা