গ্রিসের অর্থনৈতিক সংকট ও ইইউর ভবিষ্যত

মুহাম্মাদ হাছিবুল ইসলাম

ইতিহাসের অভিধায় ধ্রæপদী সভ্যতা ও সংস্কৃতির দেশ গ্রিস। জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য ও দর্শন শাস্ত্র গড়ে ওঠার পটভূমি অনেকটাই আবর্তিত হয়েছিল দেশটিকে ঘিরে। বিশ্বের প্রথম গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা ভাবতে গেলে প্রাচীন গ্রিসের নগরাষ্ট এথেসের কথা বলতে হয়। পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতির নানা গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত, অনুসিদ্ধান্ত ও রীতি-নীতি প্রতিষ্ঠার গ্রেকো-রোমান অর্থনীতিবিদদের ভূমিকা ও ইতিহাস সম্প্রতি এ গ্রিসের অর্থনীতিই এমন একটি সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। যা ইইউ কে প্রশ্ন বিদ্ধ করে তুলছে। বিশেষত গ্রিসে কিছু দিন আগে সমাপ্ত নির্বাচনের ক্ষমতায় আসা বামপন্থী সরকারটি নানা উন্নয়নের ¯^প্ন দেখলেও প্রথম ধাপ হিসেবে ঋন সংকট কাটিয়ে উঠতে কয়েক সপ্তাহ আগে গ্রিসের জন্য আই এস এফ-এর বরাদ্দ কৃত আন্তুর্জাতিক ঋন সহায়তা তাহবিলের মেয়াদ পর্যন্ত বাড়াতে হয়েছে। তবে তারা মাত্র চার মাস সময় দিতে চেয়েছে যেটা পরিস্থিতির সঙ্গে মোটেও মানানসই বলা যাবেনা।

গ্রিসের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ বা ঋণে আরো কিছু নতুন সমস্যা রয়েছে, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অনেক নতুন শর্ত। এ শর্তগুলো মেনে ঋন পরিশোধ করা গ্রিসের জন্য যেমন কঠিন, তেমনি নতুন করে ঋন সহায়তা না মিললে দেউলিয়া হয়ে যাবে দেশটি। নতুন নির্বাচন কিংবা ক্ষমতার পালাবদলেও ঋনের বোমা ও চলমান আর্থিক সংকটের সমাধান হয়নি যে দেশগুলোয়, গ্রিস তার সর্বশেষ উদাহরন, অনেক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক বলে থাকেন, অভিন্ন অর্থনীতির চিন্তা কাউকে উন্নতির শিখরে যেমন পৌছে দিতে পারে তেমনি কোন দেশকে দেউলিয়াত্বের শেষ সীমায় টেনে নিতেও এ অর্থ ব্যবস্থাই যথেষ্ট। ইইউর দেশগুলোর এ অর্থনৈতিক সংকট খুব বেশি দিনের নয়। ২০১১ সালের মাঝামাঝি এ সমস্যা ঘৃনীভূত হওয়ার আগে অভিন্ন ইউরোপের ধারনাটিকে কেউ অমূলক ও বাস্তবতা বির্বজিত চলার দুঃসাহস দেখাতে পারেননি।

উপরন্ত ১৯৫৭ সালের দিকে ইউরোপীয় কমিউনিটি সৃষ্টির পর ১৯৯২ ফেব্রæয়ারীতে ¯^াক্ষরিত ম্যাসটিট চুক্তি এতে আরো অনেক দূর এগিয়ে নেওয়ার পথ করে দেয়। বিশেষ করে ইইউ ভূক্ত দেশগুলোয় একক মুদ্রা ও একটি ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবনা যুক্ত হয়েছিল। বাস্তবধর্মী এ পদক্ষেপ সবার উপকৃত হবার সুযোগ থাকায় কেউ আর ও প্রস্তাবে না করেনটি। একই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালের মার্চে সম্পাদিত চুক্তি ইউরোপকে আরে একধাপ এগিয়ে দেয়। ১৯৯৯ সালের ১লা জানুয়ারী ইউরোপের একক মুদ্রা প্রচলন লক্ষ্য করা যায়।, আমরা জানি, ২০০৪ সালের আগে পূর্ব ইউরোপের কোন দেশ ¯^াভাবিক রীতির মাধ্যমে ইইউর সঙ্গে যুক্ত হতে পারেননি। তাদের যুক্ত হওয়ার পথে কাটা বিছিয়ে দেয় কোপেন হেগেনের বিশেস নীতি। এখানে হয় কতগুলো শর্ত, যা পূরন না করলে কারো পক্ষে ইইউর সদস্যপদ পাওয়া সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে গণতান্তিক সংস্কৃতিক প্রচলন, মুক্তবাজার অর্থনীতির সমর্থন, মানাবাধিকার, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাদান, মুক্ত মতামত প্রকাশের সুযোগ রাখা, জনগণের প্রতিনিধত্বশীল শাসন কাঠামো প্রনয়নের পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার প্রতি জোর দেয়া হয়। উপরোক্ত শর্তপূরন করে কয়েকটি পূর্ব ইউরোপীয় দেশ ২০০৪ ও ২০০৭ সালে ইইউতে যোগ দিতে সমর্থ হয়। কিন্ত এটি রাজনৈতকি ভাবে তাদের একটি বড় বলয়ে যোগদানের সুযোগ মাত্র। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারায় চোখে পড়ার মত তাদের কোন উন্নয়ন হয়নি। পক্ষান্তরে বসনিয়া হার্জেগোভিনা কিংবা ক্রোয়েশিয়ার মত দেশগুলো এখন বাইরে রয়েছে ইইউরো অঞ্চলরে, যা কোন আশার কথা বলেনা। শুরু থেকেই নানা সংকট জর্জরিত ইইউর অর্থনৈতিক সংকট এখন সব সমস্যাটাকে টপকে গিয়ে বড় বিপর্যয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

বিশেষে করে গত বছরই যেখানে ইউরো ব্যবহারকারী অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির অর্থ ছিল মূল্যের কোটায়। গ্রিসের অর্থনৈতিক সংকট আমাদের কি শিক্ষা দেয় গ্রিসের শক্তিশালী নেতৃত্ব টয়শ শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একধরনের চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পেরেছিলেন। এত করে সিপরামের নেতৃত্বধীন সাইরিজা আনয়েল কোয়ালিশন সরকারের পতন হতে পারত। কিন্ত তা হয়নি। বরং শতকরা ৬১.৩১ ভাগের সমর্থন তিনি পেয়েছিলেন এই সমর্থন ট্রয়কার সঙ্গে গ্রিস সরকারের পথকে আরো প্রশান্ত করবে। এটা সত্য যে প্রধানমন্ত্রী সিপরাস অনেক শক্তিশালী। গনভোটে গ্রিক বাসী স্পষ্টতই রায় দিয়েছে। যে তারা ট্রয়কা কর্তৃক প্রস্তবিত অর্থনৈতিক পূনরুদ্ধার পাকেজ (বেইল আউট) সমর্থন করে না। এখানে ছুটি সমস্যা তৈরি হয়েছে। এক গ্রিক জনগন কৃচ্ছ্রতা কর্মসূচী পরিত্যাগ করায় সিপরাস এখন বেইল আউট প্যাকেজকে হ্যাঁ বলতে পারেব না। যদি হ্যাঁ ভোট আসতো তিনি পড়তেন অন্যদিকে ইউরো জোন নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে জার্মানির আস্থাহীন। গ্রিস সরকারের সাতে আলোচনা করে উভয় পক্ষ নমূনা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

কতগুলো পরিসংখ্যান দিলেই বোঝা যাবে সংস্কার আনতে গিয়ে গ্রিসের অর্থনীতিই কি পরিমান ধস নেমেছে। ২০১০ সালের পর ২৯ লক্ষ লোকের পেনশনের পরিমান শতকরা কমানো হয়েছে। এটা করা হয়েছিল আই, এস এফ এর পরামর্শ অনুযায়ী। গ্রিসের বর্তমানে ঋনের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৩২০ বিলিয়ন ডলার যা কিনা জিডিপির ১৮০ ভাগ। অথচ কিছুদিন পূর্বে ছিল ৬০ শতাংশ। ২০০৮ সালে জিডিপির পরিমান ছিল ৩৫৪ বিলিয়ন ডলার ২০১৩ সালে এসে দাড়ায় ২৪২ বিলিয়ন ডলার। অর্থনৈতিকি সংকট ও আই এস, এফের পরামর্শ অনুযায়ী চলার প্রায় কাছাকাছি সময় থেকে গ্রিসে ১০ লাখ লোক চাকরি হারিয়েছে। এই মূহুর্তে কর্মক্ষম গ্রিকবাসির প্রতি ৪জনে একজন বেকার। সাম্প্রতিক সময়ে ২ লাখ গ্রিক নাগরিক দেশ ত্যাগ করেচে। যাদের অনেকেই ইঞ্জিনিয়ার অথবা ডাক্তার এবং আইটি সেক্টরে কাজ করে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয় মেলবোনে প্রায় ৪ লাখ নাগরিক বসবাস করেন। এবং সেখানে এক ব্যাংকারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন আমি এক হোটেলে কাজ করি। মাত্র ১১ মিলিয়ন জনসংখ্যার এ দেশটিতে ১০ লাখ মানুষের কোন ¯^াস্থ্য ইন্সুরেন্স নেই। যেখানে ইউরো যোনের যে কারোর গড় হিসাব হচ্ছে জনসংখ্যার ১১.১১ ভাগ সেখানে গ্রিসে এই সংখ্যা দাড়িয়েছে ২৫.৬ ভাগ। অথচ ২০১২ সালের জুলাই মাসে ইউরো কাগজি ও ধাতব মুদ্রা চালু হওয়ার পর। গত নয় বছরে কোন সমস্যা না হলে ও ২০১৩ -২০১৪ সালে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। এর মধ্যে গ্রিস ও ইতালি অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। দেশগুলো ঋন রোধ করতে না পেরে অনেকটা দেউলিয়া হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে গ্রিস ও ইতালির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি চরমে উঠে কিন্তু গ্রিসের পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। সেখানে সরকারের পতন, বিচারপতি পাপাদেমাসের নেতৃত্বে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার, কিংবা ২০১৫ নির্বাচনে বামপন্থী এলেক্রিস সিপ্রাসের নেতৃত্বে একটি সরকার গঠিত হলেও গ্রিস অর্থনৈতিকভাবে নেতৃত্বে একটি সরকার গঠিত হলেও গ্রিস অর্থনৈতিকভাবে ¯^য়ং সম্পূর্ন হতে পারেননি। একসময় যুক্তি তুলে। বিট্রেন ও ডেনমার্ক ইউরো জোনে যোগ দিতে চায়নি। কিন্তু সেই যুক্তি তখন সত্য বলে প্রমানিত হল। ফলে প্রশ্ন উঠেছে ইউরোপের ভবিষ্যত নিয়ে। ঋন সংকট জর্জরিত ইউরোপে আবার ও সংস্কার আশক্সখা বাড়ছে ২০১৩-১৪ সমসমীক্ষায় ইউরো জোনে প্রকৃতি হয়েছিল। প্রতিবেদনে গ্রিসের সংসদের অধিকাংশ সদস্য ৫ জন গনভোটের না ভোটের পক্ষে মতামত দিয়েছে। শোনা যায় গ্রিস তার পুরোনো ‘‘ ড্রাকমা’’ পুনরায় চালূ করার প্রস্তুতি গ্রহন করেছে। পরিশেষে বলা যায় গ্রিস যদি ইউরোপীয় জোন থেকে বেড়িয়ে যায় এর একটা মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সারা প্রথিবীর অর্থনীতিতেই পড়বে। এর মধ্যে বিশ্বের প্রতিটি স্টকএক্সচেঞ্জা তেকে ৩৫ মিলিয়ন ডলার হাওয়া হয়ে গেছে। মুদ্রা হিসেবে ডলারের মান ও কাছে বলা হচ্ছে প্রতিক্রিয়া হিসেবে ২০১৬ সালে এশিয়ার প্রবৃদ্ধি ০.৩ কমে যাবে। গত ২০০৮ সালেই গ্রিসে অর্থনৈতিক সংকট চলছিল। গ্রিসের বাজেট ঘাটতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। দেশটিতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে বেকারত্ব, বেড়ে চলছে আনুষঙ্গিক অন্যান্য ব্যায়। গ্রিসের সংকট সমাধানের জন্য ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক দপ্তর।

গ্রিসের অর্থনৈতিক সংকট
গ্রিসের অর্থনৈতিক সংকট শুধুমাত্র গ্রিসের ভবিষ্যতকেই একটি অনিশ্চয়তার মাঝে ঠেলে দিয়েছে তা নয়। বরং বিশ্বের অথনৈতিক ব্যবস্থার উপর এটা একটা বড় আঘাত। গত ৩০জুন ছিল গ্রিসের আই. এম এফের কাছ থেকে নেওয়া ১০০ কোটি ৭০ লাখ ডলার ঋন পরিশোধ করার সর্বশেষ তারিখ। নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋন পরিশোধ করতে না পারায় গ্রিস কার্যত এখন একটি ঋন খেলাপি রাষ্ট্রে পরিণত হল। ৫ জুলাই গ্রিস সরকার সে দেশে একটি গন ভোটের আয়োজন করেছে। অর্থনীতি রক্ষায় (বেল আউট) এই গণভোট গ্রিসের সিপ্রাস সরকার গণভোটে ঋন দাতাদের অতিরিক্ত বাজেট প্রস্তাবের বিরোধীতা করেছেন। এবং গন ভোটে না সূচক ভোট দেওয়ার জন্য জনগনের প্রতি আহŸান জানিয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা চাচ্ছেন জনগণ সেখানে হ্যাঁ সূচক ভোট দিক। না সূচক ভোট জয়যুক্ত হলে গ্রিস ইউরো জোন (১৯ দেশ) থেকে বেরিয়ে যাবে এবং তাদের নিজ¯^ মুদ্রা ড্রাকমা পুনঃ প্রবর্তন করবে। এর মধ্য দিয়ে আগামীতে গ্রিস ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে ঋন ছিল ইউরোপ বাসীর। এক ইউরোপের ধারনা কল্পনাই থেকে যেতে পারে। ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হওয়ার আগ পর্যন্ত ছিলনা। বরং ১৯৫৭ সালে ইউরোপিয়ান কমিউনিটি সৃষ্টির পর ১৯৯২ সালের ফেব্রæয়ারীতে ¯^াক্ষরিত ম্যাসট্রিট চুক্তি ছিল অভিন্ন ইউরোপ গঠনের লক্ষে একটি বড় ধরনের পদক্ষেপ। ম্যাসট্রিট চুক্তিতে একটি একক মুদ্রা ও একটি ইউরোপীয় ব্যাংক প্রতিষ্টার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এরপর ১৯৯৭ সালের মার্চ মাসে সেভেন চুক্তি ও ১৯৯৯ সালে ১ জানুয়ারী ইউরোপের একক মুদ্রা ইউরো চালুর সিদ্বান্তের মধ্য দিয়ে অভিন্ন এক ইউরোপের দিকে যাত্রা শুরু করেছিল। ইউরোপ বলা ভাল ১৯৯৩ সালে ১লা নভে¤^র ইউরোপীয় কমিউনিটি ইইউ নাম ধারন করে। পূর্বে সমাজ তন্ত্রের পতনের পর ২০০৪ ও ২০০৭ সালে পূর্ব ইউরোপের বেশ কটি দেশ ইইউতে যোগ দিয়েছে। ইইউর সদস্য সংখ্যা এখন ২৮/১৯৯৯ সালে ১৫ টি দেশে ইউরো চালু ছিল এখন চালু রয়েছে ১৭ টি দেশ। ইউরো চালু হওয়ার সময়ই ইউরো নিয়ে প্রশ্ন ছিল।

বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা
গ্রিসের বর্তমান ঋন ৩২০ বিলিয়ন ইউরো, নির্ধারিত সময় ৩০ জুনের মধ্যে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের তালিকাভূক্ত হয়ে গেছে দেশটি। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ইসিবি নতুন করে আর জরুরী তহবিল সরবরাহ করবে না বলে জানিয়ে গিয়েছে। গ্রিস ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন-ভাতা কমিয়ে দেওয়া হয়। খরচ কমানোর প্রভাবে আশাঙ্কাজনক হারে উৎপাদন কমে যায়। ফলে তৎক্ষনিক সমাধান হিসেবে কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয় দেশটির সরকার। হাজার হাজার মানুষ বেকার হতে শুরু করে। একদিকে চাকরিতে ঢোকার উপযোগী বেকার তরুন সমাজ, অন্যদিকে ছাটাইয়ের শিকার হযে না বেকার। বর্তমানে গ্রিসে বেকারত্বেও হার ২৬.৫ শতাংশ। এই পুল সংখ্যক কমৃক্ষম মানুষ বেকারত্বের শিকার হওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত দেশটির অর্থনীতি ও রাজনীত। দেশটির লোকসংখ্যার ৩৩ শতাংশ জাতীয় ¯^াস্থ্য বীমার বাইরে ৩২ শতাংশ দারিদ্র সীমার নিচে। জিডিপি ২৫০ বিলিয়ন ডলারের থেকে ছয় বছরে কাছে বিলিয়ন ডলারের দাঁড়িয়াছে। বর্তমানে দেশটির জাতীয় তার জিডিপির ১৭৭ শতাংশ ইউরো ইউনিয়নের নিয়ম অনুযায়ী, কোন দেশের বাজেট ঘাটতির মাত্রা কোন অবস্থাতেই ৩ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। গ্রিসের বর্তমান বাজেট ঘাটতির পরিমান মোট জাতীয় উৎপাদনের ১২.৭ শতাংশ। ৩০ জুনের মধ্যে আত্মজাতিক অর্থ তহবিলকে ঋনের ১.৮ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে দেশটি। এছাড়াও ১০ মূলাইয়ের মধ্যে সাড়ে তিন বিলিয়ন ইউরো মূল্যমানের বন্ড ও ২০ আগষ্টের মধ্যে ৩.২ বিলিয়ন ইউরো মূল্যমানের বন্ড পরিশোধ করতে হবে। আর এসব ঋন পরিশোধ তখনই সম্ভব হবে, যখন গ্রিসের প্রধান মন্ত্রী আলেক্রিস সিপরাসের সরকার আন্তর্জাতিক ঋনদাতাদের সঙ্গে অন্তত ৮.১ বিলিয়ন ডলারের নতুন বেল আউট ধসে পড়া অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবীত করতে ঝুকিপূর্ন বিনিয়োগ চুক্তি ¯^াক্ষর করবেন। বর্তমান দেউলিয়া হয়ে পড়েছে বেশ কিছু ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারী সংস্থা। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) অতিরিক্ত জরুরী তহবিল বৃদ্ধি করতে না চাওয়ায় গ্রিসের সব ব্যাংক এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ছিল। এর আগে ব্রাকেলসে ইউরো জোনের ১৯ টি দেশের অর্থমন্ত্রীর লাগাতার একপক্ষ কাল আলোচনায় গ্রিসের সংকট মেটেনি।

সংকটের কারণ
বিশ্লেষকদের মতে, গ্রিসের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের জন্য ইউরো জোন ভূক্ত দেশগুলোর অভিন্ন মুদ্রা ইউরোপীয় ১৯১৯ সলের ১ জানুয়ারী চালু হয় এই মুদ্রা। এর আগে ঋন দাতারা গ্রিসকে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে দেখতে। ফলে এখানে অতিরিক্ত অর্থলগ্নিকে তারা ঝুঁকি পূর্ন মনে করত। কিন্তু ইউরো জোনের ভূক্ত হওয়ার পর ঋন দাতারা গ্রিসকে আর বিনিয়োগ জন্য ঝুঁকিপূর্ন বলে মনে করেনি। তারা বিপুল পরিমান অর্থ ঋন দিতে শুরু করে। সে সময় ঋন দাতারা দেশটিকে মধ্য আয়ের দারিদ্র দেশ হিসেবে বিবেচনা করিনি। ফলে তারা জামানিকে ক্ষুদে ঋন দিয়েছে। সেই হারে গ্রিস কেও ঋন থাকে। আর ঋন পেতে হলে গ্রিসের সামনে ঐহারে মেনে নেওয়া ছাড়া উপাও ছিলনা। কারন একটাই তার মুদ্রা ও তখন ইউরো। উচ্চ সুদে ঋন নেওয়ায় ইউরো জোন ভূক্ত হওয়ায় শ্রম বাজারে মজুরীর পরিমান বাড়াতে হয়। ফলে খুব দ্রুতই বানিজ্য ঘাটতি দেখা দেয়। ১৯৯৯ সালের বানিজ্য ঘাটতি যেখানে দেশটির জিডিপির ৫ শতাংশের ও কম ছিল ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে এস তা বেড়ে ১৫ শতাংশে দাড়িয়েছিল। দেশটির অর্থনীতিতে অব্যবস্থাপনা ও সংশ্লিষ্টদের অসততা সরকারের ঋনের বোঝা আরো বাড়িয়ে দেয়। গ্রিসের অর্থনৈতিক সংকটের আরেকটি কারনে পেনশন ব্যবস্থা। ২০১২ সালের ইউরোষ্ট্যট তথ্য অনুযায়ী, দেশটির জিডিপির সাড়ে ১৭ শতাংশ খরচ হয় পেনশন খাতে। অথচ ইতালি, ফ্রান্স ও অষ্টিয়ার মতে দেশগুলোতে এ খরচ ১৫ শতাংশের বেশি নয়। এই বিপুল পরিমান অতিরিক্তি অর্থ ব্যয় ও দেশটিকে ধসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। হয়ত ২০০৪ সালের অলিম্পিক অর্থ খরচ হয়েছে কিন্ত তা উঠে আসে নি। সাথে সরকারী খাতে খরচ বেশি এবং রাজ¯^ ভান্ডার আয়কর না নিয়ে তাদের রাষ্ট্রীয় কোষাগার শুন্য হয়ে যায়। কিন্ত তাদের কোন প্রস্তুতি ছিলনা মনের সুখে ব্যয় করে গেছে তারা। তারা ভেবেছিল ইইউ তাদের সাহায্যে করবে। তাদের মুদ্রাস্ফীতির মাত্রা দেওয়া হয়েছি। শতকরা ত% কিন্তু তাদের মুদ্রাস্ফীতির দাড়িয়েছে ১২% এক্ষেত্রে ও গ্রিস ব্রাসেলসকে ফাঁকি দেয়। ধোকাবাজি করে রাষ্ট্রীয় বুক কিপিং বা হিসাব রক্ষন প্রনালি ঠিকঠাক আছে দেখিয়ে গ্রিস বেশ ভালো ভাবেই চালিয়ে যাচ্ছিল। গ্রিসের প্রধান মন্ত্রী সিপরাম জাতির উদ্দেশ্য ভাসনে চলেছিল জনগনকে না ভোট দেওয়ার আহŸান জানিয়ে চলেছিলেন। গণভোটে হ্যা জিতলে তিনি পদত্যাগ করবেন। গ্রিসে ৫ জুলাইয়ের গণভোটে না ভোট জয়ী হয়েছে। না ভোট পড়েছে ৬১.৩ শতাংশ। বিপরীতে হ্যাঁ ভোট পড়েছে ৩৮.৭ শতাংশ না ভোট এর মানে আলোচনা সব পথ শেষ অপর দিকে ইউরোপীয় নেতারা এই ফলাফলে হতাশা ব্যাক্ত করেছেন। জার্মানি ও ফ্রান্স একটি দুই স্তর বিশিষ্ট ইইউ চেয়ে বসে এরই মধ্যে। সাবেক ফরাসি নেতা নিকোলাই সার কোজি মুক্তমতে এ বিভক্তির কথা বলতে কোনো দ্বিধাদ্ব›েদ্ব ভুগেননি। এদিকে জার্মাানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা সার্কেল ও চাইছেন এমনি একটি রদবদল, যা ইইউর ভবিষ্যতকে বিপন্ন না করে। ইইউ ছোট অর্থনীতির দেশ গুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। তার থেকে উত্তরেনে আগে মনোযোগ দেয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা এজন্য একক মুদ্রা প্রচলিত হলেও তার সঙ্গে ক্রয়ক্ষমতা, বিনিয়োগ, অর্থনীতির আশার পিপিপি তথা পার্চেজিং পাওয়ার প্যারিটি এবং আনুসঙ্গিকতাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিচার করার বেশ জোরে শোরেই বলা হচ্ছে এখন।

২০০৮ সালে ছিল মাত্র ৭.৮ ভাগ। গত ৫ বছরে আই এম এফের পরামর্শ অনুযায়ী অর্থনীতিতে কচ্ছ সাধন করে আসছে। বর্তমানে বেতন কামানো হয়ে শতকরা ২০% ভাগ। সরকারী সেক্টরে বেতন বৃদ্ধি ‘ফ্রিজ’ করে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী স্নিপরাম চেয়েছিলেন ন্যুনতম বেতন ৭৫০ ইউরোতে (৮৩৫ ডলার) উন্নীত করতে কিন্তু আই এম এফ তা দেয়নি। গ্রিসে শতকরা ২০ শতাংশ মানুষ ৬৫ বছরের উপরে এই বুড়ো মানুষ গুলোর পেনশন কমানো হয়েছে শতকরা ৪৮ ভাগ। এত করে মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নতি করা যায়নি। প্রথিবীবাসী লক্ষ করেছে গ্রিসে গ্রহহীন মানুষের সংখ্যা শতকরা ২৫ ভাগ। চিন্তা করার বিষয় গ্রিসের মত একটি উন্নত দেশে শতকরা ২৫ ভাগ মানুষের থাকার কোন জায়গা নেই। গ্রিসের পরিস্থিতি কে অনেকেই ২০০০১ সালের আর্জেন্টিনার সাথে তুলনা করছেন। ঋন পরিশোধ করতে না পেরে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল। যদিও পরবর্তী সময়ে ঋন দাতা আবার ঋন দিয়েছিল। আজকে গ্রিসের পরিস্থিতি জি¤^াবুয় ও সোমলিয়ার সাতে তুলনা করা হচ্ছে। এই দেশ দুটিও ঋন পরিশোধ করতে না পেরে দেউলিয়া হয়েছিল। মূলত বিশ্ব ব্যাংক কড়া শর্তে দিয়ে থাকে এবং সেটা এক ধরনের সুপারিশ মালা এ কারনে অনেক রাষ্ট্র ঋন পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়ে পড়ে। বর্তমানে ইইউর ঐক্য নিয়ে যে সন্দেহ চিল তা আর ও বাড়বে। এর মধ্যে ইইউর দেশগুলোকে দুস্তর বিভক্ত করার প্রস্তাব উঠেছে। জার্মাানি ও ফ্রান্স দুস্তর বিশিষ্ট ইউরোপীয় ইউনিয়ন চাচ্ছে। ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট সার কোজি স্পষ্ট ভাবেই এ বিভক্তির কথা বলেছে। জার্মানির চ্যান্সেলর সেরকেল চাচ্ছেন একটা পরিবর্তন। তিনি বলেছেন নয়া ইউরোপ গঠনের কথা। যদিও এই বিভক্তির বিরোধীতা করেছেন ইইউর সাবেক চেয়ারম্যান জোসেফ ম্যানুয়েল বারেসো। কিন্তু এখন ইউরোপ ভাগ হবে কি না এ বলা দূরহ ব্যাপার। তবে একটি পরিবর্তন যে আসন্ন তা বর্তমান গ্রিসের অবস্থা দেখা যাচ্ছে। কেননা ইইউ ছোট অর্থনৈতিক দেশ গুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। এটাই ইইউর ব্যর্থতা ত্ াব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী ক্যামেরন স্পষ্টই বলেছেন। আমরা যদি এসব সমস্যা নিয়ে উদ্যেগ নিতেনা পারি, তাহলে ইউরোপের পতন হবে এবং ব্রিটিশরাও পতনের দিকে যেতে থাকবে। অতীতে ইইউ সর্ম্পকে এত ভয়ঙ্কর কথা কেউ বলেননি। সামনের দিনগুলো অত্যন্ত কঠিন সময় ইইউর জন্য । অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ভাবে কাটিয়ে উঠতে না পারলে আমরা আগামী এক দশকের মদ্যে এক ভিন্ন ইউরোপের চেহারা দেখতে পারবো। এবং বর্তমানে গ্রিসের সরকার মনে করছেন প্রায় ৫৩ বিলিয়ন ইউরো হয়তো গ্রিসকে ঋন নিতে হতে পারে তাহলে তারা মাথা উচ্চু করে সাধারন ভাবে দাড়াতে পাড়বে।

লেখক
কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন

  • লেখাটি ইশা ছাত্র আন্দোলন-এর দ্বিমাসিক মুখপাত্র ‘ছাত্র সমাচার’ আগস্ট-সেপ্টেম্বর’১৫ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।