ইশা ছাত্র আন্দোলন-এর ২৫ বছর পূর্তিতে সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান-এর অনুভূতি
বাংলাদেশের এই ছোট পরিসীমার মধ্যেই অসংখ্যজাত-উপজাতের উপস্থিতি। তার মাঝে আবার গড়ে ওঠেছে শত-সহ¯্র দল-উপদল। এতসব দল-মতের মাঝে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করে ভাল-মন্দের যাচাই করাটা সত্যিই দূরুহ। তদুপরী এখানে ধর্মকে পূজি করে গড়ে উঠছে আরও অসংখ্য মত ও পন্থা। তাই এতটুক ভালোটা খুজে পেতে নাকাল হতে হয় এদেশের মানুষকে।
বিশেষ করে স্বাধীনাতা পরবর্তি বাংলাদেশে স্বাধীনতার রূপকার শক্তি, ঘোষক শক্তি, মিত্রশক্তি ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বারংবার বিভিন্ন আশা-প্রতিশ্রুতির ওপর ভর করে এদেশের ক্ষমতায় আসীন হয়েছে। কিন্তু শোষন, বঞ্চনা, ত্রাস ও ক্ষমতার দ্বন্ধে রক্ত ঝরানো ছাড়া তারা জাতীকে আর কিছুই দিতে পারেনি। অপর দিকে ধর্মীয় অনুভূতি প্রবণ এই বাংলাদেশে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে ধর্মের নামে জাত-পাত ও মত-পথে বিভক্ত করেছে একশ্রেণির সুবিধালোভী ধর্ম ব্যবসায়ীরা। ফলশ্রুতিতে একদিকে রাষ্ট্রীয় জুলুমে হয়েছে জনজীবন ওষ্ঠোগত অন্যদিকে ধর্মের অপব্যাখাকারীদের হটকারীতায় সাধারণ মানুষ হয়েছে বিভ্রান্ত। এমনই এক মুহুর্তে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ গণমানুষের আস্থা ও ভালবাসা নিয়ে পথ চলতে শুরু করে। আর যেহেতু দেশের সেই প্রেক্ষিতে স্বার্থান্বেষী রাজনীতিক ও দিকভ্রান্ত ধর্মকারদের সবেচে’ বেশি কোপানলের শীকার হয়েছে ছাত্র সমাজ। তাই ছাত্রদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই আল্লাহর কুতুব সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাই রহ. প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এর প্রাসঙ্গিকতা কতুটুকু তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রতিষ্ঠার শুরুতে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন যে লক্ষ্য স্থীর করেছে তা ছিল এক যুগান্তরকারী পদক্ষেপ। যেখানে নির্দিষ্ট করে দেয়া হযেছে- একজন মুসলমানের জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত? জাহিলিয়াতের সকল প্রকার আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী খোলাফায়ে রাশেদার নমুনায় সাহাবায়ে কিরামের অনুসৃত পথে মানব-জীবন গঠন ও সমাজের সর্বস্তরে পূর্ণ দ্বীন বাস্তবায়ন। নির্ধারিত এই লক্ষ্যেটি আমরা একটু বিশ্লেষণ করলেই বুঝতে পারবো যে, ইশা ছাত্র আন্দোলন জাহিলিয়াতের মোকাবেলায় মানবজীবন গঠনের পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে; যারা কুরআন-সুন্নাহর আদর্শে নিজেদের গড়ার পাশাপাশি খোলাফা ও সাহাবাগণের অনুসৃত পথে দেশে ইসলামী হুকুমাত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে যাচ্ছে। এখন অপেক্ষা সমাজ পরিবর্তনের।
শায়েক রহ. একসময় ছাত্রদের রাজনীতি করাকে পছন্দ করতেন না। কারণ, প্রচলিত ধারায় রাজনীতিতে ছাত্রদের ভূমিকা ছিল কেবলই ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়িসদৃশ। তাই তিনি ভাবলেন- এ সকল ছাত্রদের সামনে যদি আমি আদর্শনির্ভর কোন সংগঠন তুলে না ধরতে পারি, যে সংগঠনের ছায়ায় ওরা নিজেদের জীবন গঠন করতে পারবে। আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে পারবে। তাহলে রোজ হাশরে আমি আল্লাহ সামনে কী জবাব দেব? এমন এক যুগান্তকারী চিন্তা থেকেই এ ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তটি তিনি নিয়েছিলেন। বলেছিলেন- আমরা রাজনীতি করি ইবাদাত হিসেবে। কেননা আমাদের রাজনীতির মূল প্রতিপাদ্যই হচ্ছে সত্যের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ।
১৯৯১এর ২৩ আগস্ট শুক্রবার চরমোনাই-এর প্রাঙ্গন থেকে সেই যে পথচলার শুরু এ পথচলা আর থামেনি। থেমেও নেই। তা কিয়ামত আর থামনেও না, ইনশাআল্লাহ।
স্যোসাল লিংকসমূহ