ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মুহতারাম আমির হযরত পীর সাহেব চরমোনাই-এর একান্ত সাক্ষাতকার
টিপাইমুখ বাঁধ অভিমূখে ঐতিহাসিক লংমার্চ এর সফল নেতা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই দা.বা.) ১৯৭১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলা সদরের চরমোনাই ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ ফজলুল করীম (রহ.) ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন (বর্তমান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ) এর আমীর ও আমীরুল মুজাহিদীন ছিলেন। তাঁর পিতামহ মাওলানা মুহাম্মাদ সৈয়দ ইসহাক (রহ.) ও এ দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন আলেম ও বুজুর্গ ছিলেন। তিনি চরমোনাই আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল ফিল হাদিস ও সাগরদি আলিয়া থেকে ইফতা সম্পন্ন করেন। তিনি তাঁর বাবার কাছ থেকে ১৯৯৪ সালে খিলাফতপ্রাপ্ত হন। ২০১৩ সালে থানভী সিলসিলার অন্যতম খলিফা আল্লামা মাহমুদুল হাসান (দা.বা.) তাঁকে খিলাফত প্রদান করেন। ২০১৫ সালে বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী বিদ্যাপিঠ দারুল উলুম দেওবন্দ এর প্রধানমুফতী- আল্লামা মুফতী হাবিবুর রহমান খায়রাবাদী তাকে খিলাফত প্রদান করেন। তিনি চরমোনাই কওমিয়া ও আলিয়া উভয় শাখার নাজেমে আ’লার দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি উভয় শাখার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দায়িত্বরত। দীর্ঘদিন তিনি চরমোনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন এর নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি। ছাত্রজীবন শেষ করার পর তিনি তৎকালীন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন এর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার অন্যতম সদস্য ছিলেন।
২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ নভেম্বর শায়েখ (রহ.) এর ইন্তেকালের পর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমীর ও আমীরুল মুজাহিদীনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি টিপাইমুখ বাঁধ অভিমূখে ঐতিহাসিক লংমার্চ, মিয়ানমার অভিমুখে লংমার্চ ও রোডমার্চসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ইসলাম, দেশ ও মানবতার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন। একদিকে পথভোলা মানুষকে আল্লাহর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে তিনি স্বীয় আরাম-আয়েশ ছেড়ে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছুটে যান; অন্যদিকে খোদাদ্রোহী শক্তির বিরুদ্ধে বজ্রহুংকার ছাড়েন সবসময়। জোটের রাজনীতিতে যখন সকল রাজনৈতিক সংগঠন আদর্শচ্যুতির পথে অগ্রসরমান; ঠিক তখনি তিনি ইসলামের স্বার্থ চিন্তা করে একলা চলো নীতিতে ছিলেন অবিচল। দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন: ‘নো আওয়ামীলীগ, নো বিএনপি ইসলাম ইজ দ্যা বেস্ট’।
তিনি জাতির রাহবার হিসেবে সংকটময় মুহূর্তে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে টিপাইমুখ বাঁধ অভিমূখে ঐতিহাসিক লংমার্চের নেতৃত্ব দিয়ে দেশের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দেন। বিশ^ ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম দিকপাল সৈয়দ ফজলুল করীম রহ. এ দেশে ইসলামী বিপ্লবের যে ভীত তৈরি করেছেন, বর্তমান মুহতারাম আমীর সে ভীতের ওপর বিপ্লবের সূরম্য প্রাসাদ নির্মাণে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। হযরত পীর সাহেব চরমোনাই এদেশের মজলুম মানুষের কান্নার ফসল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। তাঁকে কেন্দ্র করে এদেশের বিপ্লবপ্রত্যাশীরা একটি বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে। সূর্যকে কেন্দ্র করে যেমন পুরো সৌরজগতের গ্রহ-উপগ্রহসমূহ আবর্তিত হয়, তেমনি এদেশের বিপ্লবকামী মানুষ তাঁকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়।
বর্তমান প্রেক্ষিতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হযরত পীর সাহেব চরমোনাই এর সাক্ষাতকার গ্রহণ করেছেন ছাত্র সমাচার এর সম্পাদক শেখ মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম এবং নির্বাহী সম্পাদক মুহাম্মাদ আল-আমিন।
ছাত্র সমাচার : আপনার সাংগঠনিক জীবনের শুরু কীভাবে?
পীর সাহেব চরমোনাই : চরমোনাই মাদরাসায় অধ্যয়নকালীন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর মাধ্যমে রাজনীতির হাতেখড়ি। সর্বশেষ ইশা ছাত্র আন্দোলন-এর কেন্দ্রীয় ছাত্রকল্যাণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি।
ছাত্র সমাচার : আপনি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ছাত্রকল্যাণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ব্যাপারে আপনার অনুভূতি কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : এ ব্যাপারে আমার অনুভূতি হলো, ছাত্র অবস্থায় সহিহ ধারার সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থাকলে সমাজ পরিচালনার যোগ্যতা তৈরি হয়, নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা অর্জন হয় এবং সর্বোপরি দীনের পথে চলার ও আমলের জজবা বৃদ্ধি পায়।
ছাত্র সমাচার : ছাত্রদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করাকে কীভাবে দেখেন? ছাত্ররাজনীতি কি ক্যারিয়ার গঠনে অন্তরায়?
পীর সাহেব চরমোনাই : মুরুব্বীদের তত্ত্বাবধানে থেকে ছাত্ররাজনীতি করা দরকার। তবে মুরুব্বী হতে হবে ‘সাদেকীন’ এর অন্তর্ভুক্ত। নিয়মতান্ত্রিক আদর্শনির্ভর ছাত্র রাজনীতি ক্যারিয়ার গঠনে অন্তরায় নয়; বরং সহায়ক বলে মনে করি। এতে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটে। অন্যদিকে সন্ত্রাসনির্ভর ছাত্র রাজনীতি শুধু ক্যারিয়ার নয়; বরং চরিত্র ও জীবনকে ধ্বংস করে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, কেউ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তাঁর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য সহিহভাবে কাজ করে এতে বাহ্যিকভাবে কিছুটা ক্ষতি মনে হলেও আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তা পুরণ করে দেবেন এবং উত্তম প্রতিদান দান করবেন। আমাদের দায়িত্ব হলো সঠিকভাবে কাজ করে যাওয়া।
ছাত্র সমাচার : আগামী নির্বাচন নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর পরিকল্পনা কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : আমাদের নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত আছে। সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হলে আমরা তিনশ আসনে প্রার্থী দেবো, ইনশাআল্লাহ। সে প্রস্তুতি চলছে।
ছাত্র সমাচার : ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বে বিকল্প রাজনৈতিক জোট গঠনের কথা মিডিয়ায় আসছে। এর বাস্তবতা কতটুকু?
পীর সাহেব চরমোনাই : ইসলামের স্বার্থে জোট হতে পারে। আমরা ইসলামকে কেন্দ্র করে ঐক্যবদ্ধ হতে চাই; ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে নয়। আমাদের স্বার্থ একমাত্র ইসলাম; ক্ষমতা বা অন্য কিছু নয়।
ছাত্র সমাচার : ইসলামী দলগুলো তো ইসলামই চাইবে।
পীর সাহেব চরমোনাই : তারা ইসলাম চাইতে পারে। তবে আমরা দেখেছি, তারা যে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়, তাতে তারা বারবার অন্যের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এতে ইসলামের কোন উপকার হয়নি। তাদের লাভ হতে পারে। আমরা ইসলামী রাজনীতির স্বাতন্ত্র ও স্বকীয়তায় বিশ্বাসী।
ছাত্র সমাচার : আপনি নির্দলীয় সরকারের দাবি করেছেন। নির্দলীয় সরকারের দাবিটা কেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। নির্দলীয় সরকারের সময় তুলনামূলক সুষ্ঠু হয়।
ছাত্র সমাচার : আওয়ামী লীগ ভিশন ২০৪১, বিএনপি ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেছে। এক্ষেত্রে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর ভিশন কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : আমাদের নতুন কোন ভিশন নেই, আমাদের মিশন এবং ভিশন হলো ইসলাম কায়েম করা।
ছাত্র সমাচার : আপনি “নো আওয়ামী লীগ নো বিএনপি ইসলাম ইজ দ্যা বেস্ট” এ স্লোগান দিয়েছেন। এর প্রেক্ষাপট কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : চরিত্রগত দিক থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এরা কেউই ইসলাম চায় না। দু’দলই সন্ত্রাস, দুর্নীতি লালন করে। উভয় দলই দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে নিজেদের স্বার্থে বিদেশিদের মনোরঞ্জনে লিপ্ত। উভয় দলই ইসলামের বিরুদ্ধাচারণ করে। কেউ করে প্রকাশ্যে আর কেউ গোপনে। এদের হাতে ইসলাম, দেশ ও জাতি নিরাপদ নয়।
ছাত্র সমাচার : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর নিকট দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেক। এ ব্যাপারে কি কিছু বলবেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : আমরা সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করছি। আশাকরি, শীঘ্রই একটা পরিবর্তন হবে, ইনশাআল্লাহ।
ছাত্র সমাচার : সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গ্রিক দেবির মূর্তি স্থাপনের প্রতিবাদে অনেক কর্মসূচি পালন করেছেন। এখন অপসারিত মূর্তি পুনঃস্থাপনের বিষয়ে কি কিছু বলবেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : আমাদের প্রতিবাদ এবং আন্দোলনের কারণে তারা এটা সরাতে বাধ্য হয়েছে। এরপর যে তারা এটা অন্যত্র পুনঃস্থাপন করেছে, এর প্রতিবাদেও আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি। ছাত্র আন্দোলন তো তাৎক্ষণিকভাবেই রাজপথে নেমেছে। সামনে আমরা পরামর্শভিত্তিক কর্মসূচি ঘোষণা করবো। তবে কথা হল, আন্দোলনের ফলে একটা পরিবর্তন তো এসেছে। এই অর্জনটাও তো কম নয়।
ছাত্র সমাচার : ২০১৬ সালের পাঠ্যবইয়ের হিন্দুয়ানি বিষয়গুলো পুনর্বহালের কথা শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : এটা কখনোই মেনে নেয়া হবে না। অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের পর বিতর্কিত সিলেবাস সংশোধন করা হয়েছে। প্রয়োজনে আবার মাঠে নামবো, ইনশাআল্লাহ। তবে মনে হয় সরকার এমন আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নেবে না।
ছাত্র সমাচার : পাঠ্যবই মূল্যায়নে সরকার একটি কমিটি করেছে। এ কমিটির গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের বক্তব্য কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : আমরা দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছি। কোন নাস্তিক বা ইসলাম বিদ্বেষী ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি জনগণ মেনে নেবে না। সরকারের গঠিত বর্তমান কমিটিতে যেহেতু চিহ্নিত কিছু ইসলাম বিদ্বেষী শিক্ষাবিদ রয়েছে, এজন্য আমরা এ কমিটি বাতিলের দাবি জানাই।
ছাত্র সমাচার : দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : দেশের অবস্থা ভালো নয়। এখন গণতন্ত্রের নামে যা চলছে এটাতো গণতন্ত্রের লেবাসে একদলীয় শাসন চলছে। অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো নয়। সামাজিক অপরাধের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ছাত্র সমাচার : বাংলাদেশের জাতীয় সমস্যা হিসেবে কোন বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করবেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : সন্ত্রাস, দুর্নীতি, বেহায়াপনা এবং চরিত্র বিধ্বংসী অপসংস্কৃতির ব্যাপক সয়লাব। বেহায়াপনা ও মাদকের মাধ্যমে জাতির ভবিষ্যত ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে।
ছাত্র সমাচার : বর্তমানে সামাজিক অবক্ষয় চরম আকার ধারণ করেছে। এর কারণ কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : এককথায় বললে বলবো, ইসলামী অনুশাসন না থাকা।
ছাত্র সমাচার : যুব সমাজের চরিত্র গঠনে করণীয় কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : এখানে বিভিন্নজনের বিভিন্ন দায়িত্ব রয়েছে। একজন যুবকের দায়িত্ব হলো, সাথি-সঙ্গী নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করা। কোন অবস্থাতেই অসৎ লোকের সঙ্গে না চলা। মা-বাবার দায়িত্ব হলো, তাদের সন্তানকে দীনের মৌলিক জ্ঞান শিক্ষা দেয়া এবং সবসময় নেগরানীর (তত্ত্বাবধানের) মধ্যে রাখা। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো, চরিত্র গঠনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা।
ছাত্র সমাচার : তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্সা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে বর্ষা মওসুমে উজানের পানিতে বাংলাদেশ প্লাবিত হচ্ছে। এ বিষয়ে কিছু বলুন।
পীর সাহেব চরমোনাই : সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণেই এমনটি ঘটছে। অন্যান্য রাষ্ট্রে দেখি, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাদের মাঝে মতবিরোধ থাকলেও পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে তারা একমত থাকে। এ ব্যাপারে তারা কোন ছাড় দেয় না। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, আমরা আজ পর্যন্ত আমাদের পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে একমত হতে পারিনি। আর সরকারের দুর্বলতার কারণে তিস্তাসহ আমাদের ন্যায্য অধিকার থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। সরকারকে দেশের স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয় হতে হবে।
ছাত্র সমাচার : সম্প্রতি ভারতে গো-রক্ষার নামে মুসলমানদের ওপর যে নির্যাতন চলছে এ ব্যাপারে কিছু বলুন।
পীর সাহেব চরমোনাই : এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ‘গরুর জন্য মানুষ হত্যা’ এটা তো মানবতার প্রতি চরম ঔদ্ধত্য! ভারত নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করে। এটা কি ধর্মনিরপেক্ষতার নমুনা? আমরা এ ব্যাপারে জাতিসংঘ, ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই। পার্শ্ববর্তী বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারকে কার্যকরী ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানাই।
ছাত্র সমাচার : ওলামায়ে কেরামগণের রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে এক ধরণের অনিহা দেখা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : আলহামদুলিল্লাহ, ওলামায়ে কেরাম তো রাজনীতিতে আসছেন। আশাকরি এর মাত্রা আরো বাড়বে, ইনশাআল্লাহ। আরেকটা বিষয় হলো, বিভিন্ন ইসলামী দল অন্য অনৈসলামিক দলের লেজুড়বৃত্তি করার কারণে অনেকের মাঝে নেতৃত্বের প্রতি ঘৃণা তৈরি হয়েছে। নেতৃত্বের প্রতি ঘৃণার কারণে ইসলামী রাজনীতির প্রতি অনিহা তৈরি হতে পারে।
ছাত্র সমাচার : ইসলামী বিপ্লবের জন্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ জরুরি। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করতে ইসলামী আন্দোলনের পরিকল্পনা কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করার জন্য আমরা বিভিন্ন সংগঠন তৈরি করেছি। এর মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের নিকট আমরা পৌঁছার চেষ্টা করছি। আলহামদুলিল্লাহ, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এখন ব্যাপকহারে ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। আশাকরি আগামীতে এটা আরো ব্যাপক হবে, ইনশাআল্লাহ।
ছাত্র সমাচার : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সবসময় ¯্রােতের বিপরীত পথ চলে। এটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একটা নীতি-আদর্শ আছে। আমরা সে আদর্শের ওপর অটল-অবিচল থেকে সামনে অগ্রসর হচ্ছি। এটা ¯্রােতের ডানে যায়; নাকি বামে যায় ইসলামী আন্দোলন তা দেখে না। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তার ¯্রােতেই আছে। মূলকথা হলো, আমরা ইসলামী রাজনীতির স্বতন্ত্র গতিপথে অগ্রসর হচ্ছি। এতে ইসলামী আন্দোলনের নিজস্ব শক্তি অর্জিত হয়েছে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছে। দেশের মানুষও ইসলামী রাজনীতি ও বস্তুবাদি রাজনীতির মাঝে পার্থক্য করার সুযোগ পাচ্ছে।
ছাত্র সমাচার : বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের লোকের বসবাস। এখানে ইসলামী সরকারের ধারণা কীভাবে সম্ভব?
পীর সাহেব চরমোনাই : ইতিহাস বলে, বিশ্বের যেখানে ইসলাম কায়েম হয়েছে, সেখানে অন্য ধর্মের লোকেরা শান্তির জন্য, নিরাপত্তার জন্য তাদের দেশ ছেড়ে ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাস করার জন্য ছুটে এসেছে। ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা অন্য ধর্মাবলম্বীদের জান-মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা দেয়। তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা পূর্ণভাবে নিশ্চিত করে। বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। এদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ। অন্যদিকে আমাদের পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর চরম নির্যাতন চলছে। বাংলাদেশে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হলে সংখ্যালঘুরা আরো অধিক নিরাপত্তাবোধ করবে, ইনশাআল্লাহ।
ছাত্র সমাচার : শায়েখ (রহ.)-এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কিছু বলুন।
পীর সাহেব চরমোনাই : তাঁর চরিত্রের অনন্য বৈশিষ্ট্য হল কথা-কাজে মিল থাকা। তিনি শরিয়তের ব্যাপারে কাউকে ছাড় দিতেন না। আপোষহীন সংগ্রামী চেতনা ছিল তাঁর অনন্য বৈশিষ্ট্য।
ছাত্র সমাচার : ছাত্র আন্দোলন হযরত পীর সাহেব চরমোনাই (রহ.)-এর জীবনী সংকলনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : খুব সুন্দর ও যুগোপযোগী উদ্যোগ। এজন্য ছাত্র আন্দোলনকে ধন্যবাদ জানাই।
ছাত্র সমাচার : বাজেট বিষয়ে কিছু বলুন।
পীর সাহেব চরমোনাই : বাজেট যে বাস্তবায়নযোগ্য নয়; এটা আমরা আগেই বলেছি। এখন অর্থমন্ত্রী নিজেই বলছেন। এ বাজেটে গরীব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে।
ছাত্র সমাচার : বছরের অধিকাংশ সময় দীনের দাওয়াত নিয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে যাচ্ছেন। দায়ি হিসেবে আপনার অনুভূতি কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : আলহামদুলিল্লাহ, মানুষের মাঝে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। দীনের প্রতি মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারছে। মানুষের মাঝে পরিবর্তন প্রত্যাশী মানসিকতায় আমি যথেষ্ট আশাবাদি।
ছাত্র সমাচার : ইশা ছাত্র আন্দোলনের নিকট আপনার প্রত্যাশা কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : প্রথমত- ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজে আদর্শবান ছেলে তৈরি করতে হবে। কারণ যে সমাজে ছাত্র ও যুবকরা আদর্শবান হয়, সে সমাজে আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি আসে।
দ্বিতীয়ত- নেতৃত্ব তৈরির কাজ আরো গতিশীল করতে হবে। আল্লাহর রহমতে আমাদের প্রচুর জনসমর্থন আছে। এখন আমাদের প্রয়োজন, সকল পর্যায়ে যোগ্য নেতৃত্ব। ছাত্র আন্দোলন থেকে সব জায়গায় যোগ্য নেতৃত্ব সাপ্লাই দিতে হবে।
ছাত্র সমাচার : অনেক সময় বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে সংগঠন করার ব্যাপারে বাধা আসে। এ ব্যাপারে করণীয় কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : হেকমতের সাথে মাতা-পিতাকে বুঝাতে হবে। সংগঠনের আদর্শ-উদ্দেশ্য তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। সর্বোপরি আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করতে হবে।
ছাত্র সমাচার : আমরা তাদেরকে কীভাবে বুঝাতে পারি?
পীর সাহেব চরমোনাই : তাদেরকে বুঝাতে হবে যে, “বর্তমানে সমাজের যে অবস্থা সেখানে কোনো ছাত্রের পক্ষে একা ও নিরপেক্ষ থাকা সম্ভব নয়। কোন আদর্শিক সংগঠনের সাথে জড়িয়ে থাকা জরুরি। সে হিসেবে আমরা চাই, এমন সংগঠনের সাথে জড়িয়ে থাকবো, যেন আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি ও মুক্তির পথ পাওয়া যায়। ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন ইসলামী আদর্শের পতাকাবাহী একটি হক ছাত্র কাফেলা। এ সংগঠনের স্লোগান হলো- সাহাবাদের অনুসরণ ইশা ছাত্র আন্দোলন।”
তাদেরকে আরো বোঝাতে হবে যে, “আলহামদুলিল্লাহ, আমরা দেখেছি যে, ছাত্র আন্দোলন প্রতিষ্ঠার পর থেকে অধ্যাবধি যারা এর সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন, তাদের পড়ালেখায় কোনো বিঘ্নতা সৃষ্টি হয়নি; বরং এর মাধ্যমে ছাত্ররা পড়াশোনায় আরো মনযোগী হয়েছে। চরিত্রবান হিসেবে গড়ে উঠেছে। এভাবে বাবা-মাকে বুঝিয়ে সংগঠনমুখী করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, তাদের সাথে কোনভাবেই বেয়াদবি করা যাবে না। নিজের আমল-আখলাক ও চাল-চলনের মাধ্যমে তাদের আস্থা অর্জন করতে হবে। আশাকরি পরিবর্তন আসবে, ইনশাআল্লাহ।
ছাত্র সমাচার : অনেক ক্ষেত্রে আমাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এক্ষেত্রে করণীয় কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিভিন্ন মহল থেকে সবসময় বাধা ছিল। এটা আছে এবং থাকবে। কোন বাধাই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের থামিয়ে দিতে পারে না। আল্লাহর ওপর ভরসা করে হেকমতের সাথে সামনে অগ্রসর হতে হবে। কোন অবস্থাতেই ইসলাম প্রতিষ্ঠার টার্গেট থেকে পিছপা হওয়া যাবে না। তবে মুরুব্বীদের সাথে বেয়াদবি করা যাবে না।
ছাত্র সমাচার : ছাত্র আন্দোলনের সর্বস্তরের জনশক্তির উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
পীর সাহেব চরমোনাই : ক. নিজের ইলম ও আমলের উন্নতির প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
খ. উর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যশীল হয়ে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
গ. মুরব্বীদের পরামর্শ অনুযায়ী চলবে। কারণ মুরুব্বীদের পরামর্শের বাহিরে চললে এ্যাকসিডেন্টের আশংকা থাকে।
ছাত্র সমাচার : আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
পীর সাহেব চরমোনাই : তোমাদেরকেও ধন্যবাদ।
স্যোসাল লিংকসমূহ