ইশা ছাত্র আন্দোলন-এর ২৫ বছর পূর্তিতে সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা গাজী আতাউর রহমান-এর অনুভূতি

Neyamat

১. ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন যেহেতু ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সহযোগী সংগঠন তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর প্রাসঙ্গিকতা কতটুকু তা নির্ভর করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট ও এর প্রাসঙ্গিকতার ওপর। স্বাধীনতা পরবর্তি এদেশে বারংবার ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। কিন্তু মানুষের স্বপ্নস্বাধ পূরণ হয় নি। ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক মুক্তি শুধু শ্লোগানে সীমাবদ্ধ থেকেছে। ‘৭১ থেকে ৮৯’ এ দীর্ঘ সময়ে এ দেশের মানুষ যাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে তারা একদিকে শাসনের নামে শোষণ করেছে, অপরদিকে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে হয়েছে ব্যর্থ। আমরা মনে করি- মানব রচিত আইন ও মানুষের শাসন এর মূল কারণ। আর মানুষের শাসনে পূর্ণাঙ্গ মুক্তি আদৌ সম্ভব নয়। তাই মুক্তি সংগ্রামী মনুষের মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হয়েছে। কারণ, মানুষ যা চেয়েছে শাসকদের মাঝে সেই গুণাবলীর উপস্থিতি ছিল না।

ভাগ্যাহত সেই মানুষের স্বপ্নস্বাধ পূরণে মানবরচিত আইনের পরিবর্তে ইসলামী আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পটপরিবর্তনের জন্য ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মূলত : প্রাথমিকভাবে কোন দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠা হয়নি; বরং সাংবিধানিক পট-পরিবর্তনের লক্ষ্যে ওলামায়ে কিরাম ও বুদ্ধিজীবি শ্রেণির একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম হিসেবে গড়ে উঠেছিল ‘শাসনতন্ত্র আন্দোলন’। যে আন্দোলন গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। শোষণের বিরুদ্ধে গড়ে তুলবে দুর্বার গণআন্দোলন। পরবর্তিতে জাতীয় মক্তির এই বিপ্লবী কর্মসূচিকে আরও বেগবান করতে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই চেতনা-পরিবর্তন স্পৃহা ও আন্দোলনের ধারাবাহিকতা পৌঁছে দিতেই ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন কে সাংগঠনিক রূপ দান করা হয়। আর এক্ষেত্রে যুবসমাজ এবং ছাত্ররাই যেহেতু নিয়ামক শক্তি তাই ১৯৯১-এ ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করা হয়।

বক্তব্য রাখছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান

প্রতিষ্ঠাকালে এর প্রাসঙ্গিকতা যতটুকু ছিলো বর্তমানে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। কেননা, বর্তমানে যুবসমাজের কাছে বিভিন্ন উপায়ে ইসলামরে দাওয়াত আসছে। আকাশ সংস্কৃতির ওপর ভর করে আশা ইসলামের বিচ্ছিন্ন চিন্তা ও দিকভ্রান্ত আহবানগুলো যুবসমাজকে আরও বেশি বিভ্রান্ত করছে। ইতোমধ্যে তাদের দেয়া টোপ গিলেও নিচ্ছে তারা। ফলে কারও কাছে এখন ইসলামের পক্ষে জিহাদ করাটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর বিপরীতে পূর্নাঙ্গ ইসলামের বাস্তব-চারিত্রিক অনুশীলনের চেষ্টা করে যাচ্ছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। যেখানে ইসলামের আধ্যাত্মিকতা ও জিহাদ কে সমন্বয় সাধনের মধ্য দিয়ে প্রকৃত সত্য ও সুন্দরের চর্চা শেখানো হচ্ছে ছাত্রসমাজ কে। তাই ইসলাম প্রতিষ্ঠার মৌলিক পদ্ধতি কেবল ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-ই অনুসরণ করছে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি। চলমান এ আন্দোলন কে আরও গতিশীল করতে পারলেই লক্ষ্যপানে পৌঁছা সহজতর হবে বলে আশা রাখি।

২. আজকের বাস্তবতা হলো, এদেশে প্রকৃত ছাত্র রাজনীতি নেই। নব্বইয়ের দশকের পর থেকে মূলধারার ছাত্র রাজনীতির চর্চা এদেশে কেউ করেনি। ইতোপূর্বে ছাত্র রাজনীতির ধারক-বাহকেরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে-শোষণের বিরুদ্ধে, জাতীয় স্বার্থের পক্ষে-গণমানুষের পক্ষে বহু ভূমিকা রেখেছে। যা জাতীয় রাজনীতিতে আজও প্রজ্জোল। কিন্তু বিগত ২৬ বছরে ছাত্র সংগঠনগুলোর চারিত্রিক অধপতন এতোটা নিচে নেমে গিয়েছে যে, প্রচলিত ধারায় ছাত্র রাজনীতির কথা বললে মনের ক্যনভাসে ভেসে ওঠে ত্রাস, হিংসতা আর নীতিহীনতার এক নৈরাজ্যকর পরিবেশ। ক্ষমতাসীনরাই ছাত্রসমাজকে এসবে বাধ্য করেছে, বারবার ছাত্রসমাজকে ক্ষমতারোহনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেছে। তাই সময়ের বাস্তবতা এখন এটাই যে, প্রচলিত ধারার ছাত্র রাজনীতির বিকল্প শক্তি হলো-ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। তারা জেনারেল শিক্ষার্থীদের মাঝে দ্বীনের ধারা ও ধর্মীয় শিক্ষিতদের কে সমাজ ও রাজনীতির সঠিক ধারায় গড়ে তুলছে। তাই ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর জনশক্তিকেই ছাত রাজনীতির মূল ধারা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করতে কবে।

৩. ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর দেশব্যাপী যে বলিষ্ঠ অবস্থান সৃস্টি হয়েছে তার পেছনে পুরোদস্তুর ভূমিকা রয়েছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দেলন-এর। সারা দেশে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে সাবেক ছাত্র নেতৃবৃন্দরা আসীন হয়েছেন। এতে করে ইসলামী আন্দোলন আরও গতিশীল আরও গণমূখী হয়েছে। এই নেতৃত্ব সৃস্টি হয়েছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর হাত ধরে। মোদ্দা কথা হল- জাতীয় রাজনীতিতে ইসলামী আন্দোলনের তৃতীয় অবস্থান ছাত্র আন্দোলনের কারণেই হয়েছে। ইশা ছাত্র আন্দোলনের সাবেক জনশক্তিগুলো সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে; বিশেষ করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবস্থান গ্রহণ করে তারা সেখান থেকে দ্বীনের পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা জাতির সামনে তুলে ধরছে। ফলে আজ সর্বত্র সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তা নিয়ে উলামায়ে কিরাম মাহফিল-জলসায় বক্তব্য রাখেন। এ অবদান ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর।

৪. সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সাম্রাজ্যবাদি শক্তির সামনে ইসলাম-ই একমাত্র চ্যালেঞ্জ। তাই ইসলাম নিধনে তারা মুসলিম নিধন ও সা্রাজ্য দখলসহ সর্বশক্তি ব্যয় করেছে। চুড়ান্ত চেষ্টা হিসেবে মুসলিম বিশ্বে বাঁধিয়েছে মুসলিম-মুসলিম ভাত্রিঘাতি যুদ্ধ। এ যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে ইতোমধ্যে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক সাম্রাজ্য অদূর ভবিষ্যতে এই ধারাবাহিকতা বাংলাদেশেও আসবে না- তা বলা যায়না। যুবসমাজের মাঝে ইসলাম কেন্দ্রিক বিভ্রান্তি তারই সাক্ষ্য বহন করে। অতএব ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন কে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। পাশাপাশি নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখে বিশ্ব রাজনীতিকদের সকল ষঢ়যন্ত্রের মোকাবেলা করতে হবে।