ইসলামপন্থিদের চেতনা সংকট

মুুহাম্মাদ রাসেল উদ্দীন

আজ আমাদেরকে; গোটা মুসলিম উম্মাহকে ঘৃণা ও অমর্যাদার চোখে দেখা হচ্ছে। আমাদের পবিত্র ইসলামকে কালিমালিপ্ত করার অপচেষ্টা চলছে। ইসলামের মহান সংস্কৃতি আজ বিলুপ্ত প্রায়। আমাদের সংস্কৃতিসেবীরা অপসংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারে যেন ঠিকাদারী হাতে নিয়েছে। পাঠ্য-পুস্তকতো দূরের কথা, মিউজিয়ামেও স্থান পাচ্ছে না ইসলামের সু-মহান ইতিহাস, ঐতিহ্য ও রাজনৈতিক দর্শন। ইসলামপন্থি মনীষীদের চিন্তাধারা বিকৃতভাবে মুসলিম উম্মাহর সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। অত্যন্ত সূ² ও সুনিপুনভাবে জাতির চেতনায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে ধর্মের উপর অনাস্থা, ¯^দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার মনোভাব।

অথচ আমরা- ইসলামপন্থিরা দল উপদলে বিভক্ত হয়ে ইসলামী রাজনীতিকে বক্তব্য, বিবৃতি ও মিছিল-মিটিং নির্ভর করে তুলেছি। আবার অনেকে ক্ষমতার রাজনীতি করতে গিয়ে লেজুড়বৃত্তির আশ্রয় নিয়েছে। যার ফলে ¯^তন্ত্র ধারায় ইসলামের পুনর্জাগরণের পথ বার বার রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। জনগণের সেন্টিমেন্টে ইসলামপন্থিদের ব্যাপারে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে। সত্যিকারার্থে যদি আমরা ইসলামী বিপ্লøবের ¯^প্ন লালন করে থাকি, তবে সর্বপ্রথম ইসলামী সংস্কৃতির বিপ্লøব ঘটাতে হবে।

জনগণের চিন্তা-চেতনা, মানসিকতা ও চাহিদা সম্পর্কে ¯^চ্ছ ধারণা অর্জন করতে হবে। যেখানে অপসংস্কৃতি জাতিকে গ্রাস করে ফেলেছে, ইসলামী রাজনীতির উপর জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে, সেখানে ইসলামপন্থিদের অবস্থান সভা-সমাবেশ নির্ভর। বড়জোর অপসংস্কৃতির প্রতি ঘৃণা প্রকাশ ও দু’একটি ফতোয়া বা বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েই ক্ষান্ত রয়েছেন। সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে একতরফাভাবে ইসলামবিদ্বেষীদের হাতে তুলে দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করছেন।
পানি পিপাসায় কাতর ব্যক্তিকে যদি পানির ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে সে দুষিত ও জীবাণুযুক্ত পানি পান করবে এটাই ¯^াভাবিক। অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে এ ফতোয়া তখনই কার্যকর হবে, যখন সুস্থ সংস্কৃতি জাতির সামনে তুলে ধরা হবে।

আজকে কবিতা, সাহিত্য, চলচ্চিত্র, নাটক ইত্যাদির মাধ্যমে জাতিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তোলা হয়েছে। চিন্তা-চেতনায় যুক্ত করা হয়েছে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, ভোগবাদিতা, প্রতারণা ও অবৈধ প্রণয়। একটি জাতির সভ্যতা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, কালচার ও বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি সাহিত্য, নাটক ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ফুটে উঠে। যেমন ভারতীয় চলচ্চিত্রে অধিকাংশই হিন্দুদের দেব-দেবীর পূজার দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। অথচ আমাদের দেশের কোন চলচ্চিত্রে ইসলামী সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তোলা হয়নি। বরং পশ্চিমা সংস্কৃতির ভাবধারায় অশ্লীলভাবে চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে। যার প্রভাবে শহর থেকে পাড়া-গাঁ পর্যন্ত সর্বত্র অশ্লীলতার সয়লাব বয়ে যাচ্ছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকলে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। ইসলামপন্থি মানেই সেকেলে, দরিদ্র, পরনির্ভর ও সংকীর্ণমনা- এ জাতীয় মনোভাব তৈরি হয়েছে। যার ফলে মুসলমানের ঘরেই সৃষ্টি হচ্ছে ইসলামবিদ্বেষী।

মুসলিম উম্মাহকে এমন দুর্দশার মধ্যে নিমজ্জিত রেখে আদৌ ইসলামী বিপ্লব ঘটানো সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস হয় না। ইসলামের সু-মহান ইতিহাস, ঐতিহ্য ও রাজনৈতিক দর্শনকে জাতির সামনে তুলে ধরার দায়িত্ব ইসলামপন্থিদেরকেই নিতে হবে। আলিফ লায়লার মত অবাস্তব কল্প-কাহীনিতে মনুষ্য হিং¯্র প্রাণী, অজগরের মত ভয়ংকর সাপের দৃশ্য প্রদর্শন করে মানুষকে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও ভীতু করে তোলা হয়েছে। টম এন্ড জেরীসহ বিভিন্ন কার্টুনের মাধ্যমে শিশুদের চেতনার বিকৃতি ঘটানো হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতীয় চ্যানেল স্টার জলসার অবাধ প্রদর্শনের মাধ্যমে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষকে নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।

অতএব ¯্রােতের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে আমাদেরকে নির্মাণ করতে হবে ইসলামী চলচ্চিত্র, নাটক ও মুভি। যেখানে ফুটে উঠবে ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্য, প্রমাণ করবে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব, প্রদর্শন করবে ইসলামী সংস্কৃতির প্রকৃত চিত্র। ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক ও সাহিত্যিকদের সচেতনতার সাথে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। উপযুক্ত, সঠিক ও সত্য কিচ্ছা কাহীনি রচনা করতে হবে। যাতে বাস্তব সাহিত্য, নাটক-গল্প ও কল্প-কাহিনীর মাধ্যমে অশ্লীল, নোংরা, ভ্রান্ত কাহীনি আর নাটকীয় চিত্র ধোঁয়া আর মরীচিকার ন্যায় বিলীন হয়ে যায়।

অত্যন্ত দুঃখ ও আফসোসের বিষয় হচ্ছে, আমাদের সংকীর্ণ মানসিকতা, একগুয়েমি ও পিছুটানের কারণেই ইসলামী সভ্যতা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ ইত্যাদিতে বিকৃতি ও পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে। যার কারণে মুসলিম উম্মাহ ও জাতির সন্তানদের অন্তরে ইসলামী সভ্যতা, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে নানা ধরণের ভীতির সঞ্চার ও ভুল ধারণার জন্ম দিয়েছে। মুসলিম উম্মাহ ও জাতির ভিতরে আবার ঈমানী স্পৃহা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হলে এবং সকল অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর যোগ্যতা ও সাহসিকতা তৈরি করতে হলে আমাদের সভ্যতা, সংস্কৃতি থেকে সকল প্রকার অপসংস্কৃতি, কল্প-কাহীনি, মিথ্যা ও ধোঁকাবাজি মুক্ত করতে হবে। ধারালো লেখনীর মাধ্যমে ইসলামী ভাবধারার কবিতা, সাহিত্য রচনা করতে কলম হাতে নিতে হবে আমাদেরকেই। উলামায়ে কেরাম যদি নিজেদের উপর দেশ ও জাতি গঠনের দায়িত্ব অনুভব করেন, তাহলে বর্তমান পরিস্থি’তি অনুধাবন করে সময়োপযোগী পরকিল্পনা গ্রহণ করা উচিত।

লেখক
প্রশিক্ষণ সম্পাদক
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন
ঝিনাইদহ জেলা শাখা