ইশা ছাত্র আন্দোলন-এর ২৫ বছর পূর্তিতে সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি কেএম আতিকুর রহমান-এর অনুভূতি
১. একটি শিশুর পরিপূর্ণ মানুষে পরিনত হওয়ার উপযুক্ত সময় ছাত্রজীবন। ছাত্রাবস্থায় আদর্শ মানুষ হতেনা পারলে ভবিষ্যতে তারহাতে দেশ ও জনগণ কোনটাই নিরাপদ থাকে না। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতাপূর্ণ মানুষ তৈরির তেমন কোন উপাদান নেই। এ অবস্থায় ছাত্র আন্দোলন দেশপ্রেমের দায়বদ্ধতার স্থান থেকে বিশাল ভূমিকা পালন করছে। এ সংগঠনে শুধু নেতাই হওয়াযায় না, একাডেমিক ক্যারিয়ার উজ্জল হওয়ার পাশাপাশি ছাত্ররা আত্মগঠনেরও সুযোগ পায় এখানে। আদর্শ মানুষ তৈরির মাধ্যমে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মাদক ইত্যাদি বড় বড় সামাজিক অপরাধ দুর করতে ছাত্র আন্দোলন বাপক অবদান রাখছে বলে আমার বিশ্বাস।
২. চূড়ান্ত লক্ষে পৌছতে তো এখনও অনেক পথ যাওয়ার বাকী। বিচার্য বিষয় হলো সংগঠন মুল লক্ষপানে সঠিক ট্র্যাকে এগুচ্ছে কিনা? আমার মনে হয় কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি ছাড়া ক্রমবর্ধ্বমান হারে সঠিক পথ ধরেই ছাত্র আন্দোলন তার লক্ষ্য পুরণে অগ্রসর হচ্ছে। এর প্রমান হচ্ছে বিভিন্ন ইস্যুতে ছাত্র আন্দোলনের সরব উপস্থিতি এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মেধাবী ছাত্রদের সম্পৃক্ততা।
৩. বিশ্বরাজনীতি ক্রমশ পরিবর্তিত হচ্ছে এটি সত্য। তবে আশা জাগানিয়া সংবাদ হচ্ছে, ইহুদী খ্রীস্টানদের বহুমুখী ষড়যন্ত্র স্বত্বেও ইসলামের জনপ্রিয়তা দিনদিন বাড়ছে। খোদ আমেরিকা-লন্ডনসহ বিধর্মী অধ্যুষিত এলাকায় ইসলাম গ্রহণের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে দেশে ইসলামপন্থী রাজনীতিবিদদের জাতীয় নেতৃত্ব গ্রহণের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। এজন্য আমাদের দেশেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যোগ্য ও চ্যালেঞ্জিং নেতৃত্ব প্রস্তুত রাখতে হবে। ছাত্র আন্দোলন এ কাজটি অত্যন্ত সফলতার সাথে করে যাচ্ছে।
৪. দীর্ঘ ২৫ বছরে ছাত্র আন্দোলনের সফলতা ব্যর্থতার খতিয়ান অনেক। তন্মধ্যে অর্জনের দীর্ঘ লিস্ট এই সংক্ষিপ্ত কলেবরে বলা সম্ভব নয়। আমার মতে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো- সারাদেশের হাজার হাজার মেধাবী তরুনকে দক্ষ রাজনীতিবিদ হিসেবে গড়ে তুলে ভবিষ্যৎ বিপ্লবের অন্যতম উপাদান প্রস্তুত করতে পারা এবং জেনারেল ও মাদরাসা পড়ুয়া বিপুল সংখ্যক ছাত্রকে সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্নজাল বুনতে শেখানো।
এছাড়া গত ২৫ বছরে ছাত্রদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাফল্যও অর্জন হিসেবে কম নয়।
৫. বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা পরবর্তীতে দেশে যতগুলি ছাত্র সংগঠন ছিল তারা মুলত কাজ করতো ক্যাম্পাসভিত্তিক। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের স্বার্থে কাজ করা আর প্রয়োজনে রাজপথে সংগ্রাম এদুয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তাদের ছাত্র রাজনীতি। অথচ বিশাল জনগোষ্ঠী মাদরাসা ছাত্রদের সাথে তাদের কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। বিশেষ করে আদর্শ মানুষ গড়ায় তাদের কোন ভুমিকা আগেও ছিল না এখনও নেই। ফলে ওসব সংগঠনের ছেলেরা সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ইত্যাদি খারাপ কাজে যতটা এগিয়ে, ভাল কাজে ততটাই দূরে থাকে। এক্ষেত্রে ছাত্র আন্দোলন ব্যতিক্রম উদাহরণ সৃষ্টি করতে পেরেছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শুধু নয়, আলিয়া কওমী মাদরাসাসহ সকল ছাত্রদের এক প্লাটফর্মে এনে যোগ্যতাসম্পন্ন নাগরিক গড়ার পাশাপাশি ভাল কিছু ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দেশকে উপহার দিচ্ছে।
৬. আল্লাহর জমীনে তারদ্বীন প্রতিষ্ঠার মহান লক্ষ্য নিয়ে পীর সাহেব চরমোনাইর আপোষহীন নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহযোগী সংগঠন ই.শা. ছাত্র আন্দোলন কাজ করে যাচ্ছে। একথা অনস্বীকার্য যে, দেশের সকল স্তরে আসন গেড়ে বসা জাহিলিয়্যাতের মুলোৎপাটন ব্যতিরেকে দেশবাসীর স্থায়ী শান্তির আশা করা যায় না। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, সচিবালয় সর্বত্র ইসলামী আদর্শের অনুপস্থিতির সুযোগে দুর্নীতিসহ সকল সামাজিক অনাচার আমাদেরকে ঘিরে রেখেছে। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে শুধু গুটিকয়েক মিছিল-মিটিং কর্মসূচি পালনই যথেষ্ট নয়। সকল সেক্টরে ভাল মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। তবেই একটি সফল পট-পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ছাত্র আন্দোলন প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন সেক্টরে দ্বীনদার, মেধাবী ও ভাল মানুষদের যোগান দিয়ে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ ইসলামী বিপ্লবের পটভুমি রচনায় বিশাল ভুমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
স্যোসাল লিংকসমূহ