হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, হযরত রাসুলে কারীম সা. ইরশাদ করেন- “তোমরা আমীরের কথা মান্য কর এবং তার আনুগত্য কর, যদিও তোমাদের জন্য কিসমিসের ন্যায় মাথাবিশিষ্ট কোন হাবশীকে শাসক নিযুক্ত করা হয়।”(সহীহ বোখারী-১৩১/৬৭২৩)

অন্য রেওয়ায়েতে রাসুল সা. আমীরকে ঢালের সঙ্গে তুলনা করে বলেন- প্রকৃতপক্ষে ইমাম বা নেতা হল ঢাল স্বরূপ, তার পশ্চাতে থেকে যুদ্ধ করা হয় এবং তার দ্বারা নিরাপদে থাকা যায়। অতএব সে যদি আল্লাহর ভয় নিয়ে তার বিধান মোতাবেক শাসনকার্য পরিচালনা করে এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে তাহলে এর বিনিময়ে সে প্রতিদান পাবে। কিন্তু যদি সে বিপরীত করে তাহলে এর গুনাহ ও সাজা তার উপরই বর্তাবে। (মুসলিম-৫৪২/১৮৪১)

সহীহ বোখারীর অপর রেওয়ায়াতে এসেছে- “যে ব্যাক্তি আমীরের আনুগত্য করলো সে যেন আমারই আনুগত্য করলো আর যে ব্যক্তি আমীরের অবাধ্যতা করলো সে যেন আমারই অবাধ্যতা করলো।” (বোখারী-৬৭২৫)

উপর্যুক্ত হাদিসত্রয়ের ব্যখ্যায় বিখ্যাত হাদিসবেত্তা আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন- আমীর বা দলপ্রধানের প্রতি নিরঙ্কুশ আনুগত্য ইসলামে ওয়াজিব। শুরাভিত্তিক পরামর্শক্রমে বা সকলের সম্মতিক্রমে যিনি আমীর হিসাবে নিযুক্ত হবেন তার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা শ্রেণী-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। ঐ শাসক বা আমীর যদিও হাবশী গোলাম হয় বা কুৎসীত চেহারার অধিকারীও হয়। আর এতেই মুসলিম উম্মাহর পরম মঙ্গল নিহীত রয়েছে। বিপরীতে আমীর যদি কুরআন-সুন্নাহ ও ইসলামী শরীয়াহর বিরুদ্ধে অবস্থান করেন, তবে তার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা আর ওয়াজিব থাকেনা। কেননা সহীহ বোখারী ও মুসলিমে হযরত আলী রা. থেকে বর্ণীত আছে, রাসূল সা. ইরশাদ করেন-নাফরমানির ক্ষেত্রে কোন আনুগত্য নেই; বরং সৎ ও ন্যায়ের ক্ষেত্রেই কেবল আনুগত্য প্রযোজ্য। এ হাদীস থেকে বোঝা যায়- নেতা বা আমীর যতক্ষণ পর্যন্ত ন্যায় ও সত্যের উপর, শরীয়ত ও কল্যাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে অধিনস্তদের পরিচালনা করবেন- ততক্ষণ পর্যন্ত তার কমান্ড মেনে চলা অধিনস্তদের অপরিহার্য কর্তব্য। এতে আল্লাহর রহমত ও সার্বিক কল্যাণের ভাগী হবে সকলেই। পক্ষান্তরে আমীরের নিকট যদি এ সকল গুণ অনুপস্থিত থাকে এমনকি সরাসরি কোন হারামে লিপ্ত থাকেন তবে তার প্রতি আনুগত্য ওয়াজিব নয়; বরং গুনাহ। আর যদি এমন হয় যে, আমীরের কোন কাজ সরাসরি হারাম বা শরীয়ত বিরোধী নয়; বরং অষ্পষ্ট (উভয়টির সম্ভাবনা রাখে) তখন শরীয়তের হুকুম হলো- এক্ষেত্রে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করা, কারণ- বিশেষ কোন যৌক্তিক কারণেও কখনো এ ধরণের আচরণ অবলম্বন করা হয়ে থাকে।

তৃতীয়ত যে হাদিসটি উল্লেখ করা হয়েছে তাতে আমীরের প্রতি আনুগত্যের একটি বিশেষ উপকারিতার দিক তুলে ধরা হয়েছে। তা হল- যে ব্যক্তি ইসলামী হুকুমতের কার্যনির্বাহী আমীরের প্রতি আনুগত্য করলো সে যেন স্বয়ং রাসুলে কারীম সা. এর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করলো। আর যে রাসুল সা. এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করলো সে যেন স্বয়ং আল্লাহ তা’আলার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করলো।

ইসলামী হুকুমতের একটি অন্যতম নীতি হল- কোন ব্যাক্তি নিজ থেকে ইমারত বা নেতৃত্বের প্রার্থী হতে পারবে না। হ্যাঁ যদি না চাইতেই কোন দায়িত্ব বা পদ অর্জিত হয় তাহলে মনে করতে হবে এ দায়িত্ব একটি আমানত। আমানতের খেয়ানত না করে বরং আমানত তার যথাযোগ্য প্রাপকের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। কেননা সহীহ বোখারীতে হযরত আ. রহমান বিন সামুরাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. ইরশাদ করেন- অর্থ: হে আবদুর রহমান! তুমি কখনো নেতৃত্বের প্রার্থী হবে না। কেননা যদি তুমি নেতৃত্ব চেয়ে নাও তাহলে তার জন্য তোমাকে উকীল বানিয়ে দেয়া হবে। আর যদি না চাইতেই নেতৃত্ব চলে আসে তাহলে তোমাকে সাহায্য করা হবে। (বোখারী-১৬৪২)

অর্থাৎ কেউ যদি সংগঠন বা কোন স¤প্রদায়ের নেতৃত্ব লাভের জন্য মানুষের কাছে প্রার্থণা করে বা কোন কৌশল অবলম্বন করে এরপর যদি সে নেতৃত্ব বা পদ লাভ করে তাহলে তার প্রতি আল্লাহর কোন সাহায্য বা রহমত থাকবে না; বরং সকল প্রকার দায়-দায়িত্ব তার বাহ্যিক যোগ্যতার ওপর ছেড়ে দেয়া হবে। এতে না সে নিজে সফলতা পাবে না সে তাদের কোন উপকারে আসবে যাদের ওপর সে কর্তৃত্বশীল। পক্ষান্তরে যদি মজলিশে শুরার পরামর্শক্রমে কিংবা জাতীয় প্রত্যাশার প্রেক্ষিতে কারো ওপর নেতৃত্ব বা কোন দলের দায়িত্ব বর্তায় তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও রহমত তার চলার পথের সাথী হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের বোঝার তাওফীক দান করুন। আমীন।