আত্মশুদ্ধি জীবন ও কর্মে আনে শুদ্ধতা ও সফলতা

ইবরাহীম আনোয়ারী

আল্লাহ তায়ালা বলেন, যে ব্যক্তি আত্মাকে পবিত্র করেছে সে সফলকাম হয়েছে আর সে ব্যর্থ হয়েছে যে আত্মার চাহিদা মতে কাজ করেছে। রাসূল সা. বলেন, বুদ্ধিমান সে, যে নিজের আত্মাকে নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখে এবং মৃত্যু পরবর্তি সময়ের জন্যে প্রস্তুতি নেয়। নির্বোধ সে, যে আত্মার চাহিদা অনুসরণ করে। শরীরে রোগ হলে চিকিৎসার জন্যে ডাক্তারের প্রয়োজন হয় আর আত্মা বিশুদ্ধ করার জন্যে হক্কানি পীরের প্রয়োজন হয়। আত্মশুদ্ধি অর্জনের  একটি বিশেষ পদ্ধতির নাম হলো পীর মুরিদি।

আত্মশুদ্ধির  লক্ষ ও  উদ্দেশ্য হল ইসলাহে বাতেন, অর্থাৎ অভ্যন্তরীন দোষসমূহ থেকে আত্মাকে পবিত্র করে সৎগুনাবলী দ্বারা তাকে সুসজ্জিত করা। এ বিষয়ে মাওলানা আবুল হাসান আলি নদভী রহ. বলেন, আত্মশুদ্ধি ফরযে আইন । প্রয়োজনীয় নেক আমল করা, আকিদা- বিশ্বাস ঠিক করা, ইখলাস, ধৈর্য, শোকর, যুহদ, বিনয়, তাওয়াক্কুল অর্জন করা এবং রিয়া, নাশোকরি, দুনিয়ার মোহ, অহংকার ইত্যাদি থেকে আত্মাকে পবিত্র রাখা। সংক্ষেপে বললে, কথায়-কাজে-বিশ্বাসে যাহেরে-বাতেনে (বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিষয়াবলীতে) পুরো শরিয়তের অনুসরণ করা ফরযে আইন। (আশ-শামস-৯, তিরমিজি, মিশকাত-৪৫১)

মানুষ মাটির তৈরী। মাটির এই দেহের ভেতরে আত্মা কিংবা রূহের অবস্থান। রূহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার নির্দেশ মাত্র। মাটির দেহ মূলত পাখির খাঁচা স্বরূপ। পাখি বিহীন খাঁচার যেমন মূল্য নেই তেমনি আত্মা বিহীন মাটির দেহের কোন মূল্য নেই। পানি যেমন মাছকে প্রাণ সঞ্চার করে তেমনি রূহ মাটির দেহে প্রাণ সঞ্চার করে। রূহ বেরিয়ে গেলে মানুষকে মৃত বলা হয়। পাখির খাঁচা মরীচিকা আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থেকে নানা প্রকার রঙের ব্যবহার করা হয়। তদ্রুপ দেহকে সুঠাম সুস্থ স্বাভাবিক রাখার জন্য মাটি থেকে উৎপাদিত ফলমূল শাক-সবজি, আলু, মূলা, গাজর ও টমেটো খাওয়ার পাশাপাশি মাঝে মধ্যে অসুস্থতা বোধ করলে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ঔষধ সেবন করতে হয়। দেহকে সুস্থ সুন্দর রাখার জন্য যেমন পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে তেমনি রূহকে সচল স্বাভাবিক রাখার জন্যও খাবারের প্রয়োজন রয়েছে।

রূহের খাবার মাটিতে উৎপন্ন হয় না। মাটির দেহের খাবার পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে আগুনে রান্না করে খাওয়া যায়। রূহের খাবার সিদ্ধ করার প্রয়োজন হয় না। রূহের খাবার সংগ্রহ করার জন্য আর্থিক কোন প্রকার টাকা পয়সা ধন দৌলত ব্যয় করতে হয় না। একাগ্রতা ও ইচ্ছা শক্তির প্রয়োজন হয়। আত্মা বিশুদ্ধ না হলে কোন আমল ইবাদত কাজে আসবে না। আত্মা বিশুদ্ধ হওয়ার একটি উপায় তাকওয়া অর্জন ও হালাল রুজি খাওয়া। আত্মাকে জীবিত রাখার উপায় সর্বদা আল্লাহকে স্মরণে রাখা, ওজুর সাথে থাকা, সুদ ঘুষ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা, যেনা ব্যভিচার থেকে বিরত থাকা, শরীয়তের হুকুম আহকামগুলো মেনে চলা ও শ্বাস প্রশ্বাসে আল্লাহর জিকিরের সাথে থাকা।

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে “হে বিশ্বাসীগণ তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবল¤^ন কর। আল্লাহর ওলিগিন কলুষিত আত্মা কিংবা রূহকে বিশুদ্ধ রাখার চেষ্টা করেন। নফল ইবাদত ও জিকিরের মাধ্যমে ক্বলবকে জিন্দা রাখেন। নিজের খেয়ালকে ক্বলবে ডুবিয়ে রাখেন। শীয়তের হুকুম আহকাম যথারীতি মেনে চলেন। দিল-ক্বলব- রূহ-আত্মা জীবিত রাখার জন্য আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালা তাঁর সুন্দর সুন্দর নাম ধরে ডাকার জন্য আমাদের বলেছেন। ঘন ঘন আল্লাহ ও তাঁর রসূল (স.) এর স্মরণ ব্যতীত ক্বলব জিন্দা হয় না। আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি অনেক বেশি দয়াবান।

তাই নিজেই শিখিয়ে দিচ্ছেন তোমরা এভাবে প্রার্থনা কর “রব্বানা আ’তিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি, হাসানাতাও অকিনা আজাবান্নার”। আল্লাহ কঠিন কেয়ামতের দিনে বিচারকের আসনে বসবেন। বান্দার পাপ পুণ্যের বিচার করবেন। অথচ আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালা বান্দাকে এত বেশি ভালবাসেন যে ক্ষমা পাওয়ার দোয়া শিখিয়ে দিচ্ছেন। আত্মাকে বিশুদ্ধ করতে হলে হালাল খাবার খেতে হবে, যেনা ও ব্যভিচার থেকে বিরত থাকতে হবে, সুদ ঘুষ পাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, মিথ্যা কথা বলা কুৎসা রটানো থেকে বিরত থাকা ও প্রতারণা থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য।

আল্লাহর অলীগণ সর্বদা সমস্ত পাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। দুনিয়ার মায়ার জালে তাঁরা বন্দি হন না। লোভ তাঁদের গ্রাস করে না। আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে মশগুল রাখেন। হালাল রুজি ব্যতীত আত্মা বিশুদ্ধ হয় না, ইবাদত কবুল হয় না”। খাদ্য হালাল না হলে নামাজ, রোজা, হজ্ব ও যাকাত কোন কাজে আসবে না। তাই সবকিছুর পূর্বে আত্মার পরিশুদ্ধতা অপরিহার্য। উপরোল্লিখিত আলোচনা থেকে বুঝা গেল, নামাজ, রোজা হজ্জ্ব, যাকাতের মত আত্মশুদ্ধিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে আত্মশুদ্ধি অর্জনের তাওফিক আন করুন। আমিন।

লেখাটির পিডিএফ ভার্সন ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন