শুধু আইন পাশ নয় ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করে নজির স্থাপন করার দাবী জানিয়েছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। আজ বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর‘২০) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে যিনা-ব্যভিচার ও ধর্ষণ বিরোধী সমাবেশে এ দাবি জানিয়েছে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এম. হাছিবুল ইসলাম।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, বর্তমানে আওয়ামী সরকার বিগত ১ যুগ ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় ধর্ষণ আজ মহামারি আকার ধারণ করেছে। সরকারের নজিরবিহীন দূর্বৃত্তায়নের রাজনীতি, অঙ্গ সংগঠন বিশেষ করে ছাত্রলীগ, যুবলীগের আধিপত্যবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ধারাবাহিক অধ্যায়। এভাবে ভোটবিহীন অবৈধ সরকার দেশের মধ্যে এক এক ক্ষমতা দানব সৃষ্টি করে রেখেছে।
সমাবেশের প্রধান অতিথি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর যুগ্ম মহাসচিব, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, যার ক্ষমতা আছে সে এক ধরনের বিচারহীনতার সুবিধা ভোগ করে সেই সুবিধা তাকে নানা অপকর্মে প্ররোচিত করে। এর মধ্যে ধর্ষণ একটি। এর জন্য বর্তমান অবক্ষয়গ্রস্ত দলীয় রাজনীতি সবচেয়ে বেশি দায়ী। ক্ষমতার সুবিধা নিতে দলে দুর্বৃত্ত-অপরাধীরা নেতৃত্বের আসন পর্যন্ত বাগিয়ে নেয়। যখনই কারো অপরাধের খবর ফাঁস হয়ে হয়ে যায়, তখন বলা হয়, সে আসলে আমাদের দলের কেউ নয় অথবা অনুপ্রবেশকারী। এটা রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব। যে রাজনীতি মানুষকে স্বপ্ন দেখাবে, সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, মানুষের পাশে থাকবে— তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখন দুর্বৃত্ত হয়ে উঠছে, খুন-ধর্ষণ-চাঁদাবাজির মতো অপরাধ করছে। আসলে পুরো রাজনীতিই বর্তমানে দুর্বৃত্তকবলিত হয়ে পড়েছে। অপরাধীদের প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন। যেকারণে মাদক ব্যবসা, অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা, চাঁদাবাজি, অর্থপাচার, খুন, রাহাজানির অভিযোগে তারা গ্রেফতার হন, ধর্ষণের ঘটনায় আসামি হন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিদ্যমান ভঙ্গুর রাষ্ট্রব্যবস্থার অধীনে আইন পাশ করে যিনা-ব্যভিচার ও ধর্ষণ রোধ করা সম্ভব নয়। অতএব আগে রাষ্ট্রযন্ত্র শুদ্ধিকরণের অভিযানে নামতে হবে। এজন্য বাংলাদেশের সর্বস্তরের সচেতন শিক্ষার্থী ও জনগণকে জাগতে হবে। আপনাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ-আসুন! যিনা-ব্যভিচার, ধর্ষণ সহ সকল অনাচার থেকে এদেশের আপামর জনসাধারণকে মুক্তি দিতে মানব রচিত তাগুতী আইন পরিহার করে চির শান্তির পথ ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হই।
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল করীম আকরামের সঞ্চালনায় ধর্ষণ বিরোধী সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুহাম্মদ আব্দুল জলিল, জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল একেএম আব্দুজ্জাহের আরেফী, প্রশিক্ষণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রিয়াদ, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ইউসুফ আহমাদ মানসুর, প্রচার ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক কে এম শরীয়াতুল্লাহ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক এম এম শোয়াইব, প্রকাশনা সম্পাদক এইচ এম সাখাওয়াত উল্লাহ, অর্থ ও কল্যাণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইবরাহিম হুসাইন, কলেজ সম্পাদক এম হাসিব গোলদার, কওমি মাদরাসা সম্পাদক নূরুল বশর আজিজী, স্কুল সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক মশিউর রহমান, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম, সদস্য সুলাইমান দেওয়ান সাকিব। এছাড়াও ঢাকাস্থ বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও নগর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে ইশা ছাত্র আন্দোলন এর কেন্দ্রীয় সভাপতি যিনা-ব্যভিচার ও ধর্ষণ রোধে আট দফা সুপারিশমালা উপস্থাপন করেন।
যিনা-ব্যভিচার ও ধর্ষণ রোধে ইশা ছাত্র আন্দোলন-এর ৮ দফা সুপারিশমালা হলো-
এক. দেশের সর্বস্তরের নারী ও পুরুষদের প্রতি আহ্বান-
পুরুষরা নারীকে সম্মান করুন। দৃষ্টি অবনত রাখুন ও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন। অবৈধ সম্পর্ক নয়; বরং বৈবাহিক বৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলে নারীত্বের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করুন।
নারীগণ চাল-চলন ও পোষাকে শালীনতা বজায় রাখুন। দেশীয় ও মুসলিম সংস্কৃতি পরিপন্থী আচরণ পরিহার করুন। বিবাহবহির্ভূ সম্পর্ক, পরকীয়া ও প্রেমের সম্পর্ক থেকে বিরত রাকুন।
দুই. পরিবার ও সমাজের প্রতি আহ্বান-
আপনার সন্তানকে ধর্মীয় অনুশাসন ও নৈতিক মূল্যবোধ শিক্ষা দিন। সৎসঙ্গে উৎসাহিত করুন। বিবাহ বন্ধনকে সহজ করে তুলুন। যৌন, মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের বিরুদ্ধে ঘৃণা সৃষ্টি ও অপরাধীকে সামাজিকভাবে বয়কট ও প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
তিন. শিক্ষক, ইমাম ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান-
যিনা-ব্যভিচার ও ধর্ষণ বন্ধে শিক্ষকগণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে, ইমামগণ মসজিদের মিম্বার থেকে সামাজিক সচেতনতা ও জনমত গঠনে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করুন। জনপ্রতিনিধিগণ ধর্ষককে আর্থিক লেনদেন, আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া থেকে বিরত থাকুন এবং নিপীড়িতকে বিচার পেতে ভূমিকা পালন করুন।
চার. বিচারক ও আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিতদের প্রতি আহ্বান-
ব্যভিচার ও ধর্ষণ রোধে আইনের শাসন বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ কার্যকরি শক্তি রয়েছে আপনাদের হাতে। তাই নিপীড়িতের প্রতি সদয় হোন এবং অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখী করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। ধর্ষনের মামলায় আরোপিত ফি বাতিল এবং শুধু আইনের নীতিগত অনুমোদন নয়; বরং দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল ও শরীয়া আইনের মাধ্যমে ধর্ষনের শাস্তি কার্যকর করুন।
পাঁচ. মিডিয়া ও গণমাধ্যম ও ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান-
ধর্ষণ ও ব্যভিচারে উস্কানিমূলক নাটক-সিনেমা, কমিক্স ও বিজ্ঞাপন প্রদর্শনী বন্ধ করুন। অবাধ যৌনাচার, অবৈধ সম্পর্ক, পরকীয়া, লীভ-টু-গেদার তথা অবৈবাহিক সম্মতিসূচক যৌন সম্পর্ক ও নারীকে পন্যরূপে উপস্থাপন থেকে বিরত থাকুন। পর্নোগ্রাফি, অশ্লীল ওয়েব সাইট, ওয়েব সিরিজ এবং ভারতীয় ও পশ্চিমাসহ ভিনদেশী অপসংস্কৃতি বিস্তার, ইতিবাচকভাবে প্রচার বন্ধ করতে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
ছয়. আইন প্রনেতাদের প্রতি বৃটিশ প্রবর্তিত ১৮৬০সালের দন্ড বিধির ধারা ৩৭২, ৩৭৩, ৩৭৫, ৩৭৬, ৪৯৭ এবং ৪৯৮ ধারাগুলো ধর্ষনের পৃষ্ঠপোষকাতায় অনেকাংশে ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে এ ধারাগুলো পরিবর্তন করতে হবে এবং শরীয়াহ বোর্ডের মাধ্যমে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
সাত. সরকারের প্রতি আহ্বান-
মাদক উৎপাদক, আমদানী, বৈধাবৈধ মদের বার, নাইট ক্লাব, স্পা এবং সকল প্রকার পতিতাবৃত্তি বন্ধ করুন।
আট. সর্বোপরি দেশের বিচারব্যবস্থা, সরকার ও বিরোধী দলের প্রতি সারাদেশে সরকারের ছত্রছায়ায় যিনা ব্যভিচার ও ধর্ষকদের উৎপাদন কারখানা বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারী দল, বিরোধী দল শিক্ষক রাজনীতিবীদ, সকল দায়িত্বশীলদের ব্যক্তিদের ঐক্য বদ্ধ ভাবে এ মহামারী থেকে রক্ষা পেতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।